বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫৮ ঝিলে জঙ্গলে শিকার। । থুবড়ে আমার সম্মুখে পড়ে গেল। প্রকাগু মাথাটি বিপুল রােমশ শরীরের নীচে একেবারে পুতে গিয়েছে,—নে এক বস্তা রােয় একেবারে নিশ্চল। ইতিমধ্যে যারা গাছে উঠে নিরাপদ হয়েছিল তাদের দুএকজনকে নেবে আসবার জন্যে অনেক সাধ্য সাধনা করতে হল। ভালুকটা সত্যি মরেছে কিনা পরীক্ষা করবার জন্যে তার গায়ে গােটাকতক ঢিল ছুড়ে, দু একটা লাঠির খোঁচা দিয়ে পরীক্ষা করে দেখে তার পর তাদের এগোতে দিলাম। ভালুকটা গুলি খেয়ে আমার বন্ধুর পাশ দিয়ে যখন যাচ্ছিল তখনই তার অবস্থা শােচনীয়। তবুও সে হার মানে নি যাবার মুখে শিকারীদের তাড়া করে চার দিকে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছিল। তাদের মধ্যে একজনতো বন্ধুর জলের বােতলটা ক্রুদ্ধ আক্রমণকারীর সম্মুখে ফেলে দিয়ে আত্মরক্ষা করেছিল। সে তৎক্ষণাৎ আগ্রহের সঙ্গে সেটিকে গ্রহণ করলে বটে, তবে বুকে তুলে নিয়ে মরে যাবার অধিক শক্তি তখন তার দেহে আর ছিল না। বুকের রক্ত ধারায় বােতলের কাপড়ের ঢাকাটি একেবারে ভিজে গিয়েছিল। মানুষটা ভালুকর হাত হতে রক্ষা পেয়েছিল, কিন্তু পালিয়ে যার ঐকান্তিক আগ্রহে পাথরের উপরে আছাড় খেয়ে পড়ে তার সর্বাঙ্গ ক্ষতবিক্ষত, রক্তাক্ত হয়ে গিয়েছিল। প্রথম গুলি খেয়ে পড়ে গিয়ে সেখান হতে উঠে আবার ১০০ হতে যাওয়া, তার পর Paradox বন্দুকের দৃিতীয় গুলি পাঁজরের মধ্যে নিয়ে, ভাঙ্গা পায়ে শিকারীদের তাড়া করে ছিন্ন করে দওয়া;-এহতেই বােঝা যায় লুকটা কি রকম কাঠ প্রাণী ও মজবুত জানােয়ার! দর্ঘ্যে প্রস্থে দৈত,প্রমাণ! আমিতাে এর মত বিপুলকায় আর বলবান দ্বিতীয় ভালুক দেখি নি। শিকারীকেও অনেক সময় আক্রমণ সহ্য করতে হয়। আহত জাই আততায়ীর পশ্চাদ্ধাবন করে। একবার একটি অতি দুর্গম স্থানে অামারই এ দুরবস্থা ঘটেছিল। রেলওয়ে ষ্টেশন হতে আমরা মােটে ১৫ মাইল দূরে ছিলাম, কিন্তু পথটি এমন বন্ধুর আর দুর্গম যে সাধারণ একটা গাড়ীতে এ পথ অতিক্রম করতে আমাদের প্রায় পূবে দশ ঘণ্টা লেগেছিল। পাহাড়ের পথে রাতের বেলায় গরুর গাড়'র মত এমন বিশ্রী যা আর কিছু হতে পারে না। একদিন সকালে বেলা প্রায় দশটার সময় দুর্ভিক্ষ পীড়িত অস্থিচর্মসার এক যুবা আমাদের তাঁবুতে এসে উপস্থিত! সঙ্গে তার একজন পথপ্রদর্শক ; তার ঘাড়ে এক থাল। দৃশ্যটি অপূর্ব । কেন যে এ ব্যক্তি এমন ভাবে সেখানে উপস্থিত হল জানবার জন্যে আমরা সকলেই উদগ্রীব ও কৌতুহলাক্রান্ত হলাম। গরীব বড় মুস্কিলে পড়েই এমন ভাবে এসেছিল। তার ভাই দুয়ার প্রদেশে (Dooars) কি বিপদে পড়েছে। আমি কাছাকাছি আছি জেনে অনুসন্ধান করে তাকে উদ্ধার করবার জন্যে আইন-ব্যবসায়ী আমাকে সেই কাজে নিযুক্ত করতে এসেছিল। আমরা তাকে আহাৰ্য্য আর পানীয় দিয়ে প্রকৃতস্থ কলে তবে সে আপন বক্তব্য নিবেদন করতে সমর্থ হ’ল। ছায়া চুরির অপরাধে কোন লােককে অভিযুক্ত করতে পারা বিশেষ তীক্ষবুদ্ধির পরিচয় সন্দেহ নেই। (এ অপূৰ্ব্ব ঘটনা আমাদের রাজধানীর আর কোন স্থানেই ঘটেছিল!) কিন্তু দুয়ার প্রদেশে যারা কর্তা, বিশেষতঃ ফৌজদারী মামলা যারা বিচার করেন, অপরাধ সম্বন্ধে তাদের ধারণ, সব ভারি অদ্ভুত। এ ব্যক্তি ডিক্তি বাের্ডের রাস্তার ধারের একটি কঁঠাল গাছ আপন বেড়ার মধ্যে ঘিরে নিয়েছিল। এই কারণে ম্যাজিষ্ট্রেট তাকে অনধিকার প্রবেশ অপরাবে শান্তি বিধান করেছিলেন। জজ সাহেবও হাইকোর্টের অনুশাসন মানতে অসম্মত হয়েছিলেন, কেননা তারও ধারণা হয়েছিল পনস জাতীয় উদ্ভিদ প্রবরকে কণ্টকিত বেষ্টনীর মধ্যে আবদ্ধ করা অবৈধভাবে বন্দী করে রাখার মতই গুরুতর অপরাধ। ।। .