ঝিলে জঙ্গলে শিকার। । প্রদেশে এই জাতীয় হবিণ অনেক পাওয়া যায়। গেল বড় দিনের ছুটীতে আমি যখন বনের মধ্যে। একটা সৃষ্টি ছাড়া জায়গায় বাস করছিলাম তখন হরিণের দল আমার “রেঙ্গীর” সম্মুখে প্রায় একশ গজ হয়ে আমাদের দেখবার জন্য এসে পঁাড়িয়ে ছিল। তার পরে ধীরভাবে কিছুক্ষণ পরে চলে গেল। প্রতি জলে বারী করে হরিণ থা:ক। প্রায় প্রতি দিন সকালেই আমার সুন্দর মাটীর বারানা হতে দেখতে পেতাম, এই সুশ্রী হরিণের দল কোন চার তাড়া খেয়ে খুব কাছ দিয়েই ছুটে পালাচ্ছে। কাছাকাছি দু তিন পাল হরিণ ছিল। আশ্চর্যের বিষয় এদের মধ্যে ভাতৃভাব বড় একটা দেখি নি। দূরে দূরেই থাকত। এখানে স্থানীয় ভাষায় হরিণের পালকে ‘গােল” বলে —ঐ গও “গােলের” ভয়েই হয়ত ভাই ভাই ঠাই, ঠাঁই হয়ে থাকে। 'তৃভাবের কথা বলতে গিয়ে একটা পুরান গল্প মনে পড়ে গেল। স্বগতোক্তি স্বরূণে সে কথা এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। ব্যাপ রটা “আণী কেলে বাসী কথা”। সে সময় একজন, পামেট সভার মেম্বার ( M. P.) সপরিবারে ভারত ভ্রমণে এসেছিলেন। শিবপুরে বােটানিকেল। গার্ডেনে (Botanical Garden’এ) নিমন্ত্রণ করে তাদের অতিথি সৎকার করা হয়েছিল। ইনি এই জাতীয় অনেকেরই মত এদেশে আগমন এবং বাসকালের সদ্ব্যয় করতে বিশেষ উৎসুক ছিলেন। ধাতু গলাবার পাএবিশেষ আবিষ্কার করে এই ব্যক্তি বহুল ঐশ্বর্যের অধিকারী হওয়ায় আমার স্বদেশীয় বন্ধুরাও অল্প সময়ের মধ্যে তৎকালীন রাজনৈতিক সমস্ত সমস্যা এবং তাহার সমাধানের উপায় তঁার উৎসুক কর্ণকুহরে ঢেলে দিতে ব্যস্ত হন। ইনি কথা কমই বলেছিলেন। সম্ভবতঃ বুঝেছিলেন অর ও অল্প। পাটিসাপ্টা পিটের পুরের মত ডজন খানেক উৎসাহী স্বদেশভক্তের মনে ঠাসা হয়ে পায়চারী করে বেড়াচ্ছিলেন। দুই এক কথা আমার কাণে এসে পৌহচ্ছিল,—যথা—“IIone Charges”, “Sciparation of the Judicial from the Executive,” “More Members of Council*, ইত্যাদি। ilome Rule’র ধুয়া তখনও ওঠেনি। কাণেখাট লােকের মত তিনি কখন, “তাই ত,” “সত্যি নাকি,” এই সব বলছিলেন। শ্ৰীমতী এবং কুমারী M, 1.'র অামার সঙ্গে সময় আরও ভাল কাটছিল। ভারতবসে সর্পভয়, ব্যাভয়, অরবিভীষিকা, আরও শত সহস্র অশুভ আশঙ্কাবশতঃ দুই দেশের মধ্যে যে সাত সমুদ্র তের নদী ব্যবান তার অপর পারে তাদের পক্ষে বসবাস করাই যে শেয়ঃতর এবং শ্রেয়ঙ্কর, এই কথারই আমি বিশদ ব্যাখ্যা করছিলাম। কোন একজনের জুতার মধ্যে বিষাক্ত সরীসৃপ আবিস্কারের ভীষণ দৃশ্য উজ্জ্বল বর্ণে বর্ণনা করতে করতে আমরা একটা জলাশয়ের নিকটবর্তী হলাম। এই পুষ্করিণীতে অনেক গুলি রাজহংস বাস করত। তাদের মধ্যে কতকগুলি সাদা আর কতকগুলি কাল। তখন তারা সবাই মিলে প্রসাধন কাৰ্যে ব্যাপৃত ছিল। আমি এদের দিকে, M, I. মহোদয়ের মনােযােগ আকর্ষণ করে জিজ্ঞাসা করলাম,-এই বিভিন্ন বর্ণের রাজহংসের মধ্যে তিনি সৌন্দর্য্যের কোন তারতম্য দেখতে পাচ্ছেন কি না? M. P.-না তা ত দেখছিনে ; উভয়েই বড় সুন্দর। আমি লক্ষ্য করছেন কি এই দুই দল সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে রয়েছে,-আদপেই মিলামিশা । করছে না ? M. P.-হ্যা হ্যা তাই ত, ভারি আশ্চর্যের কথা।
পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/৯৭
অবয়ব