বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:টুনটুনির বই.djvu/১২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

তখন পিঁপড়ে অনেক কাঁদল, তারপর ভাবল, ‘এখন পিঁপড়ীকে তো নিয়ে গঙ্গায় ফেলতে হয়।’

 এই ভেবে সে পিঁপড়ীকে কাঁধে করে নিয়ে গঙ্গায় চলল; সেখান থেকে গঙ্গা অনেক দূরে, যেতে অনেক দিন লাগে। পিঁপড়ে পিঁপড়ীকে নিয়ে সমস্ত দিন চলল। তারপর যখন সন্ধ্যে হল, তখন সে দেখল যে সে রাজার হাতিশালে এসেছে—সেই যেখানে তাঁর সব হাতি থাকে। পিঁপড়ের বড্ড পরিশ্রম হয়েছিল, তাই সে পিঁপড়ীকে নিয়ে সেইখানে বসে বিশ্রাম করতে লাগল। সেইখানে মস্ত একটা হাতি বাঁধা ছিল, সেটা রাজার পাটহস্তী। হাতিটা শুঁড় নাড়ছিল, আর ফোঁস-ফোঁস করে নিশ্বাস ফেলছিল, আর তাতে পিঁপড়ীকে সুদ্ধ পিঁপড়েকে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। কাজেই পিঁপড়ে রেগে বললে, ‘খবরদার!’ হাতি কিন্তু তা শুনতে পেল না। সে আবার নিশ্বাস ফেললে, আবার তাতে পিঁপড়েকে উড়িয়ে লিল। তাই পিঁপড়ে আরো রেগে খুব চেঁচিয়ে বললে, ‘এইযো! খবরদার! ভালো হবে না কিন্তু! হতভাগা, পাজী!’

 হাতি ভাবলে, ‘ভালোরে ভালো, ওখান থেকে কে আমায় চিঁঁ চিঁ করে গাল দিচ্ছে? আমি তো কাউকে দেখতে পাচ্ছি না।’ এই বলে সে তার পা দিয়ে সে জায়গাটা ঘষে দিলে!

 পিঁপড়ের তো এখন ভারী বিপদ। সে ভাবলে, ‘মাগো, এই বুঝি পিষে গেলুম!’ কিন্তু তারপরেই সে দেখলে যে সে পিষে যায়নি, হাতির পায়ের তলায় যে ছোট ছোট গর্ত থাকে তারই একটায় ঢুকে সে বেঁচে গিয়েছে, আর পিঁপড়ীকেও ছাড়েনি!

 তখন আর তার আনন্দ দেখে কে? সেই গর্তের ভিতরে বসে সে হাতির পায়ের মাংস খুঁড়ে খেতে লাগল। যতক্ষণ না সে পিঁপড়ীকে নিয়ে একেবারে হাতির মাথার ভিতরে গিয়ে ঢুকেছিল ততক্ষণ সে খুঁড়তে ছাড়েনি।

 হাতির কিন্তু তাতে ভারী অসুখ হল। সে খালি মাথা নাড়ে, আর চ্যাঁচায় আর পাগলের মতন ছুটোছুটি করে। সকলে বললে, ‘হায়-হায় হাতির কি হল?’ তারা কেউ জানে না যে, হাতির মাথায় পিঁপড়ে ঢুকেছে। যদি জানত আর হাতির পায়ের তলায় খুব করে চিনি মাখাত, তাহলে সেই চিনির গন্ধে পিঁপড়ে তখুনি বেরিয়ে আসত। কিন্তু তারা তো আর তা জানে না! তারা বদ্যি ডাকল, ওষুধ খাওয়াল, আর তাতে হাতি মরে গেল।

 সেদিন রাত্রে রাজামশাই স্বপ্ন দেখলেন যে, তার হাতি যেন এসে তাঁকে বলছে, ‘মহারাজ, তোমার জন্যে আমি অনেক খেটেছি আমাকে নিয়ে গঙ্গায় ফেলবে।’

 সকালে ঘুম থেকে উঠেই রাজামশাই হুকুম দিলেন, ‘আমার হাতিকে নিয়ে গঙ্গায় ফেলতে হবে।’

১২১