পাশের খেতে এক চাষা কাজ করছিল। জোলার কান্না শুনে সে বললে, ‘কি হয়েছে?’
জোলা বললে, ‘আমার কাস্তের জ্বর হয়েছে।’
তা শুনে চাষা হাসতে-হাসতে বললে, ‘ওকে জলে ডুবিয়ে রাখ, জ্বর সেরে যাবে।’
জলে ডুবিয়ে কাস্তে ঠাণ্ডা হল, জোলাও খুব খুশী হল।
তারপর একদিন জোলার মায়ের জ্বর হয়েছে। সকলে বললে, ‘বদ্যি ডাক।’ জোলা বললে, ‘আমি ওষুধ জানি।’ বলে, সে তার মাকে পুকুরে নিয়ে জলের ভিতরে চেপে ধরল। সে বেচারী যতই ছটফট করে, জোলা ততই আরো চেপে ধরে, আর বলে, ‘রোস, এই তো জ্বর সারছে।’
তারপর যখন বুড়ী আর নড়ছে-চড়ছে না, তখন তাকে তুলে দেখে সে মরে গেছে। তখন জোলা চেঁচিয়ে কাঁদতে লাগল, তিনদিন কিছু খেল না, পুকুর পাড় থেকে ঘরেও গেল না।
এক শিয়াল সেই জোলার বন্ধু ছিল। সে জোলাকে কাঁদতে দেখে এসে বললে, ‘বন্ধু, তুমি কেঁদ না, তোমাকে রাজার মেয়ে বিয়ে করাব।’
শুনে জোলা চোখ মুছে ঘরে গেল। তারপর থেকে সে রোজ শিয়ালকে বলে, ‘কৈ বন্ধু, সেই যে বলেছিলে?’
শিয়াল বললে, ‘যখন বলেছি, তখন করাবই। আগে তুমি খান কতক খুব ভালো কাপড় বুনগে দেখি।’ জোলা দুমাস খালি কাপড়ই বুনল। তারপর শিয়াল তাকে খুব করে সাবান মেখে স্নান করতে বলে, রাজার কাছে মেয়ে চাইতে বেরুল।
কানে কলম গুঁজে, পাগড়ি এঁটে, জামা জুতো পরে, চাদর জড়িয়ে, ছাতা বগলে করে, শিয়াল যখন রাজার কাছে উপস্থিত হল, তখন রাজামশাই ভাবলেন, এ খুব পণ্ডিত লোক হবে। তিনি জিগগেস করলেন, “কি শিয়াল পণ্ডিত, কি জন্যে এসেছ?’
শিয়াল বললে, ‘মহারাজ, আমাদের রাজার সঙ্গে আপনার মেয়ের বিয়ে দেবেন কিনা তাই জানতে এসেছি।’
শিয়াল মিছে কথা বলেনি, সেই জোলার নাম ছিল ‘রাজা’। কিন্তু রাজামশাই মনে করলেন বুঝি সত্যি-সত্যিই রাজা। তিনি ব্যস্ত হয়ে জিগগেস করলেন, ‘তোমাদের রাজা কেমন?’