পাতা:টুনটুনির বই.djvu/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 তার ঘরে চাল ছিল না বলে ভিতরে চাঁদের আলো আসত, তাই শিয়াল বললে, ‘ঘরময় চাঁদের আলো।’ কিন্তু রাজামশাই ভাবলেন, বুঝি সেটা তাঁর নিজের বাড়ির মতন খুব ঝকঝকে জমকালো একটা বাড়ি!

 বুদ্ধি তার ছিল না, আর সে লেখাপড়াও জানত না। কাজেই শিয়াল বললে, ‘বুদ্ধি তার আছে যেমন, লেখাপড়া জানে তেমন।’ কিন্তু রাজ ভাবলেন, তার ভারী বুদ্ধি, সে ঢের লেখাপড়া জানে।

 ‘এক ঘায় তার দশটা পড়ে’ এ কথাও সত্যি। দশটা মানুষ নয়, দশটা ধানের গাছ। সে চাষা ছিল, কাস্তে নিয়ে ধান কাটত। রাজামশাই কিন্তু ভাবলেন, সে মস্ত বড় বীর, তার এক ঘায় দশ জন মানুষ মরে যায়।

 সে ধানের চাষ করত আর কাপড় বুনত। ধান থেকেই তো ভাত হয় তাই লোকে খায়, আর কাপড় পরে। তাই শিয়াল বললে, ‘তার গুণে লোক খায় পরে।’ রাজামশাই কিন্তু সেই রকম বুঝলেন না। তিনি ভাবলেন বুঝি সে ঢের গরিব লোককে খেতে পরতে দেয়।

 কাজেই তিনি খুব খুশী হয়ে শিয়ালকে এক হাজার টাকা বকশিশ দিলেন, আর বললেন, ‘এমন লোকের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেব না তো কার সঙ্গে দেব? তোমার রাজাকে নিয়ে এস, আট দিনের পর বিয়ে হবে।’

 শিয়াল সেই হাজার টাকার থলে বগলে করে, নাচতে-নাচতে জোলার কাছে এল। এসে দেখে জোলা খালি কাপড়ই বুনছে। দু মাসে সে এত কাপড় বুনেছে যে সেই গ্রামের সকলের এক-একখানি করে কাপড় হতে পারে।

 শিয়াল সেই টাকার থলে থেকে দুটি করে টাকা আর এক-একখানি কাপড় গ্রামের সকলকে দিয়ে বললে, ‘আট দিন পরে রাজার মেয়ের সঙ্গে আমাদের বন্ধুর বিয়ে হবে, আপনাদের নিমন্ত্রণ।’ শুনে তারা ভারী খুশী হল। জোলা বোকা হলেও বড় ভালোমানুষ ছিল, তাই সকলে তাকে ভালোবাসত।

 তারপর শিয়াল আর সব শিয়ালের কাছে গিয়ে বললে, ‘ভাই সকল, আমার বন্ধুর বিয়ে, তোমাদের নিমন্ত্রণ। তোমরা গান গাইতে যাবে।’ শুনে শিয়াল সব হোয়া-হোয়া করে বললে, ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, যাব, যাব।’

 তারপর শিয়াল ব্যাঙেদের কাছে গিয়ে বললে, ‘ভাই সকল, আমার বন্ধুর বিয়ে, তোমাদের নিমন্ত্রণ। তোমরা গান গাইতে যাবে।’

 সকল ব্যাঙ ঘোঁৎ-ঘোঁৎ করে বললে, ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, যাব, যাব।’

 তারপর শিয়াল শালিকদের কাছে গিয়ে বললে, ‘ভাই সকল, আমার বন্ধুর বিয়ে, তোমাদের নিমন্ত্রণ। তোমরা গান গাইতে যাবে।’

 শালিকের দল কিচির-মিচির করে বললে, ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, যাব, যাব।’

৩০