কাক অনেকক্ষণ ধরে ঘরের চালে চুপ করে বসে রইল। তারপর রান্নাঘরে একটু শব্দ হতেই সে বললে, ‘ঐ! এবারে রান্না হয়েছে।’
খানিক বাদে আর একটু শব্দ হল, আর অমনি কাক বললে, ‘ঐ! এবারে বাড়ছে।’
খানিক বাদে আর একটু শব্দ হল, অমনি কাক বললে, ‘ঐ! এবারে খাচ্ছে!’
সত্যি-সত্যি ব্রাহ্মণ আর তার মেয়ে তখন খেতে বসেছিলেন। সে পায়েস এতই ভালো হয়েছিল যে তারা দুজনেই তা প্রায় শেষ করে ফেললেন। ব্রাহ্মণীর জন্যে খুব কম রইল। তারপর ব্রাহ্মণীর খাওয়া যখন শেষ হল, তখন পাতে বা হাঁড়িতে পায়েসের একটু দাগ অবধি রইল না।
কাক এতক্ষণ বসে থেকেও যখন কিছু খেতে পেল না, তখন তার বড্ড রাগ হল। সে মনে-মনে বললে, ‘আমাকে এমন করে ঠকালে! এর শোধ দিতেই হবে।’
ব্রাহ্মণের বাড়ির কাছে একটি প্রকাণ্ড বন ছিল, সেই বনে মস্ত একটা বাঘ থাকত।
কাক দুষ্টু ফন্দি এঁটে সেই বাঘকে গিয়ে বললে, ‘বাঘমশাই, আমাদের ব্রাহ্মণঠাকুরের একটি সুন্দর মেয়ে আছে। আপনি এমন সুন্দর বর, আপনার সঙ্গে মেয়েটির বিয়ে হলে বড় ভালো হয়।’
বাঘ বললে, ‘বিয়ে ঠিক করে দেবে কে? আমি কথা কইতে গেলে তে। তারা ছুটে পালাবে!’
কাক বললে, ‘আপনাকে কিছু করতে হবে না, আমি সব করে দিচ্ছি। আগে আপনি ব্রাহ্মণকে কিছু খাবার পাঠিয়ে দিন।’
বাঘ বললে, ‘বেশ কথা! আমি গ্রামে গিয়ে কুত্তা মেরে বামুনের বাড়ি রেখে আসব।’
কাক তা শুনে জিভ কেটে বললে, ‘না-না! তারা কুত্তা খাবে না! আপনার বাড়িতে যে লেবুর গাছ আছে, সেই গাছের লেবু পাঠিয়ে দিন। আমি লেবু নিয়ে যাব এখন।’
বলে সে কয়েকটা লেবু নিয়ে ব্রাহ্মণের বাড়িতে দিয়ে এসে বললে, ‘বাঘমশাই, তারা তো লেবু খেয়ে ভারী খুশী হয়েছে। এমনি করে দিন কতক লেবু দিলেই মেয়ে দিয়ে দেবে।’
শুনে বাঘ আহ্লাদে মাটিতে গড়াগড়ি দিতে লাগল।
এমনি করে কাক রোজ লেবু নিয়ে যায় আর বাঘকে বলে, ‘তারা মেয়ে বিয়ে দেবে।’ আসলে সেটা মিথ্যে কথা, কিন্তু বাঘ মনে করে, ব্রাহ্মণ বুঝি সত্যি-সত্যি মেয়ে দেবে বলেছে।