এমনি নানা কথা ভাবতে-ভাবতে জোলা একটা নদীর ধারে এসে উপস্থিত হল, আর ঠিক তখুনি তার ভয়ানক জল তেষ্টা পেল। জোলা ডাঙার উপর ফুটিটা রেখে জল খেতে গিয়েছে, এর মধ্যে যে কোথা থেকে এক শিয়াল সেখানে এসেছে, তা সে দেখতে পায়নি। তার জল খাওয়া হতে-হতে, শিয়ালও ফুটি প্রায় শেষ করে এনেছে। এমন সময় জোলা তাকে দেখতে পেয়ে, ‘হায় সর্বনাশ! আমার ঘোড়ার ছানা পালাল।’ বলে তাড়া করলে!
শিয়ালকে ছুটে ধরা কি জোলার কাজ। সে শিয়াল তাকে মাঠের উপর দিয়ে, বনের ভিতর দিয়ে, কোথায় নিয়ে গেল তার ঠিকানা নেই। শেষে জোলা আর চলতে পারে না। তখন ঘরে ফিরতে গিয়ে দেখে, পথ হারিয়ে গেছে।
তখন রাত হয়েছে, কাজেই আর ঘরে ফিরবার জো ছিল না। জোলা অনেক খুঁজে এক বুড়ীর বাড়িতে গিয়ে একটু শোবার জায়গা চেয়ে নিলে। বুড়ীর দুটি বই ঘর ছিল না। তার একটিতে বুড়ী আর তার নাতনী থাকত। আর একটিতে জিনিসপত্র ছিল, সেইটিতে সে জোলাকে জায়গা দিলে।
একটা বাঘ রোজ রাত্রে বুড়ীর ঘরের পিছনে এসে বসে থাকত। বুড়ী তা টের পেয়ে, রাত্রে কখনো ঘরের বাইরে আসত না, তার নাতনীকেও আসতে দিত না। কিন্তু নাতনীটি জোলার কাছে তার ঘোড়ার ডিমের কথা একটু শুনতে পেয়েছিল, তার কথা ভালো করে শুনবার জন্যে সে আবার তার কাছে যেতে চাইল। তখন বুড়ী তাকে বললে, ‘না-না, যাস্নে! বাঘে-টাগে ধরে নেবে।’
‘বাঘে-টাগে’ এমনি করে লোকে বলে থাকে। টাগ বলে কোনো জন্তু নেই। কিন্তু বাঘ তো আর সে কথা জানে না, সে ঘরের পিছনে বসে টাগের কথা শুনে ভারী ভাবনায় পড়ে গেছে। সে ঠিক বুঝে নিয়েছে যে, টাগ তার নিজের চেয়েও ঢের ভয়ানক একটা জানোয়ার বা রাক্ষস বা ভূত হবে। আর তখন থেকে তার বেজায় ভয় হয়েছে, আর সে ভাবছে, টাগ যদি আসে কোনখান দিয়ে সে পালাবে!
এমন সময় সেই জোলা ভোর হয়েছে কিনা দেখবার জন্যে বাইরে এসেছে। এসেই সে বাঘকে দেখতে পেয়ে মনে করলে ‘ঐ রে! আমার ঘোড়ার ছানা বসে আছে!’
অমনি সে ছুটে গিয়ে, বাঘের নাকে মুখে গলায় কাপড় জড়িয়ে তড়াক করে তার পিঠে উঠে বসল!
বাঘ যে তখন কি ভয়ানক চমকে গেল কি বলব। সে ভাবল ‘হায়-হায়! সর্বনাশ হয়েছে! নিশ্চয় আমাকে টাগে ধরেছে!’ এই মনে করে বাঘ