বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:টুনটুনির বই.djvu/৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 সেইখানে একটা হাঁড়ি বাঁধা ছিল। বুদ্ধুর বাপ তার পিছনে লুকিয়ে দেখতে লাগল বাঘেরা কি করে।

 বাঘেরা এসেই সেই হাঁড়ির আড়ালে বুদ্ধুর বাপকে দেখতে পেয়েছে। তখন তারা তাকে গাল দেয়, ভেঙচায় আর কত রকম ভয় দেখায়! বুদ্ধুর বাপ চুপটি করে হাঁড়ি ধরে বসে আছে, কিচ্ছু বলে না।

 তারপর বাঘেরা মিলে বুদ্ধুর বাপকে ধরবার এক ফন্দি ঠিক করলে। তাদের মধ্যে যার খুব বুদ্ধি ছিল সে বললে, ‘আমাদের মধ্যে যে সকলের বড়, সে মাটিতে গুঁড়ি মেরে বসবে। তার চেয়ে যে ছোট, সে তার ঘাড়ে উঠবে। তার চেয়ে যে ছোট, সে আবার তার ঘাড়ে উঠবে। এমনি করে উঁচু হয়ে, আমরা ঐ হতভাগাকে ধরে খাব।’

 তাদের মধ্যে সকলের বড় ছিল সেই ঠেঙাখেকো লেজকাটা বাঘটা। তার লেজের ঘা তখনো শুকোয়নি বলে সে বসতে পারত না, বসতে গেলেই তার বড্ড লাগত। কিন্তু না বসলেও তো চলবে না, যেমন করেই হোক বসতে হবে। এমন সময় একটি গর্ত দেখতে পেয়ে, সে সেই গর্তের ভিতরে লেজটুকু ঢুকিয়ে, কোনো মতে বসল। তারপর অন্য বাঘেরা এক-একজন করে তার পিঠে উঠতে লাগল।

 এমনি করে, বাঘের পিঠে বাঘ উঠে, দেখতে-দেখতে তারা প্রায় বুদ্ধুর বাপের সমান উঁচু হয়ে গেল। আর একটু উঁচু হলেই তাকে ধরে ফেলবে।

 বুদ্ধুর বাপ বলছে, ‘যা হয় হবে, একবার শেষ এক ঘা মেরেই নি।’ এই বলে সে হাঁড়িটি খুলে হাতে নিয়ে বসেছে—সেই হাঁড়ি সকলের উপরকার বাঘটার মাথায় ভাঙবে।

 এমন সময় ভারী একটা মজা হয়েছে। যে গর্তে সেই লেজকাটা বাঘ তার লেজ ঢুকিয়েছিল, সেই গর্তটা ছিল কাঁকড়ার। কাঁকড়া কাটা লেজের গন্ধ পেয়ে আস্তে আস্তে এসে তার দুই দাঁড়া দিয়ে তাতে চিমটি লাগিয়েছে। চিমটি খেয়ে বেঁড়ে বাঘ বললে, ‘উঃ, হুঃ! ঘেয়াও! হাল্লুম! আরে উপরেও বুদ্ধুর বাপ, নীচেও বুদ্ধুর বাপ!’ বলতে বলতেই তো সে লাফিয়ে উঠল আর তার পিঠের বাঘগুলি জড়াজড়ি করে ধুপধাপ শব্দে মাটিতে পড়ে গেল। ঠিক সেই সময়ে বুদ্ধুর বাপও লেজকাটা বাঘের পিঠে হাঁড়ি আছড়ে ফেলে বললে, ‘ধর। ধর বেঁড়ে বেটার ঘাড়ে ধর!’

 এর পর কি আর বাঘের দল সেখানে দাঁড়ায়? তারা লেজ গুটিয়ে, কান খাড়া করে, যে যেখান দিয়ে পারল ছুটে পালাল। আর কোনোদিন তারা বুদ্ধুর বাপের বাড়ির কাছেও এল না।

৮৩