পাতা:তত্ত্ববিচার.pdf/১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০
তত্ত্ববিচার।

দেখিয়া, বুদ্ধি বা অভিজ্ঞতার পরীক্ষা করিয়া সাধু চিনিতে পারা যায় না। সাধনাই সাধুর মূল; সাধনবিহীন তুমি আমি তাহা কিরূপে বুঝিব? সাধু কতটুকু সাধনায় অগ্রসর হইয়াছেন, কতটুকু সাধন-সিদ্ধির লক্ষণ তাহাতে পরিস্ফুট হইয়াছে, সাধনক্ষেত্রের কোন্ গূঢ় গর্ভে নিভৃত রত্নভাণ্ডারের অধিকার সাধু লাভ করিয়াছেন, তাহা দেখিয়া লওয়া অসাধকের সামর্থ্যবহির্ভূত। কেবল গোটাকতক লম্বা, চওড়া জ্ঞানের কথা ছাড়িলেই সাধু হওয়া যায় না। সাধুতা ফল্গু নদীর প্রবাহের ন্যায় হৃদয়ের ভিতর দিয়া-লোকনয়নের অতীত স্থান দিয়া প্রবাহিত হইয়া থাকে। যাঁহার হৃদয় সাধু তিনিই প্রকৃত সাধু। আজ কালের একজন বিখ্যাতনামা কলিকাতাস্থ পণ্ডিতকে কাশীবাসী জনৈক ব্রাহ্মণ জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন যে, “মহাশয়, সাধু কে, তাহা কেমন করিয়া বুঝিব?” তাহাতে তিনি নাকি উত্তর দিয়াছিলেন, “যাঁহার কেহ কোন নিন্দা না করে, তিনিই সাধু।” আমরা এই উত্তর শুনিয়া হাস্য না করিয়া থাকিতে পারিলাম না; কেন না, এমন কোন সাধু কোন দেশে জন্মগ্রহণ করেন নাই, যাঁহার কেহ নিন্দা বা নির্য্যাতন করে নাই। স্বয়ং ভগবানও অবতীর্ণ হইয়া লোকনিন্দায় হস্ত হইতে নিস্তার পান নাই। সাধু সাধুতাযুক্ত হইলেও, আমার বুদ্ধি ও বিচারদোষে, আমি তাঁহাকে অসাধু বলিয়া বুঝিলাম, নিন্দা করিলাম; আমি নিন্দা করিলাম বলিয়াই কি সাধু অসাধু হইয়া যাইবেন? যাহার কেহ নিন্দা করে না, তিনি সাধু, ইহা অপসিদ্ধান্ত। কিন্তু যিনি কাহারও নিন্দা করেন না, পরনিন্দা শুনিলে যাঁহার হৃদয় ব্যথিত হয়, তিনিই সাধু।

“সচ্ছিদ্রঃ ছিদ্রয়তান্যাং সূচীব খলদুর্ম্মু খঃ।
পশ্চাচ্চ সুঅবৎ সাধু পরচ্ছিদ্রং বিলুষ্পতি॥”