পাতা:তত্ত্ববিচার.pdf/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তত্ত্ববিচার।
১১

 ছুঁচ স্বয়ং সচ্ছিদ্র, তাই কাপড় সেলাই করিবার সময় যে যে স্থান দিয়া গমন করে, সকল স্থানকেই ছিদ্রযুক্ত করিয়া যায়; সেইরূপ খল ও দুর্ম্মুখগণ অচ্ছিদ্রযুক্ত সাধুর নামকেও ছিদ্রযুক্ত করিয়া দেয়। কিন্তু সূচীসংলগ্ন সূত্র যেমন সূচীকৃত ছিদ্ররাশিকে পরে বিলুপ্ত করিয়া আসে, সেইরূপ সাধুগণ নিন্দকের পরিকল্পিত অন্যের নিন্দারাশি বিলোপ করিয়া দেন। হৃদয় ভরিয়া সাধুকে ভালবাসিতে না পারিলে সাধুসঙ্গের সুমধুর ফল পাওয়া যায় না।

 সাধু চিনিতে পারিলেই যে আমরা সাধুসঙ্গ করিতে সমর্থ হই, তাহা নহে। যিনি সাধুকে ভালবাসিতে জানেন, এবং সাধু যাঁহার প্রতি কৃপা করেন; তাঁহারই প্রকৃত সাধুসঙ্গ হইয়া থাকে। সাধুর কথাবার্ত্তা শ্রবণ করাই সাধুসঙ্গ নহে; সাধুর সেবা করা ও সাধুর আজ্ঞা প্রতিপালন করাই সাধুসঙ্গ। সাধুর অনুরক্ত ভক্ত যখন সেবানুরাগী হইয়া সাধুর সমীপে বাস করেন, তখনই সাধুর পবিত্র শক্তিরাশি পুষ্পের সুগন্ধ প্রবাহের ন্যায় তাঁহারও হৃদয়ে প্রবাহিত হইয়া থাকে। যেমন নিদাঘ-কালীন আতপতাপে শরীর অতিশয় সন্তপ্ত হইলে ও মশকদংশকাদির দংশনে নিতান্ত জ্বালয়তন হইলে, মহিষগণ জলাশয়ে গিয়া গাত্রনিমজ্জন করিয়া থাকে, সেইরূপ বিষয়-সেবার বিপুল সন্তাপে নিতান্ত কাতর হইলে মানবগণ প্রাণ শীতল করিবার জন্য সাধুদিগের সঙ্গলাভে কৃতার্থ হইতে যায়। মহিষগণের মধ্যে কতক গুলি ক্ষণকাল জলে ডুবিয়া শরীর শীতল হইলে, সিক্তকলেবরে উঠিয়া আসে; আবার গায়ের জল শুকাইলে তপন-তাপে ও মশক-দংশকের উৎপীড়নে কাতর হইলে, পুনর্ব্বার জলে গিয়া প্রবেশ করে। এইরূপে সমস্ত দিন তাহাদের জলে স্থলে দৌড়াদৌড়ি করিতে হয়। কতকগুলি মহিষ এরূপ আছে যে, স্থলে উঠিলেই ক্লিষ্ট হইতে হয় বলিয়া তাহারা