পাতা:তত্ত্ববিচার.pdf/১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তত্ত্ববিচার।
১৩

তপস্তেজের রত্নরেণুরাশি হৃদয় মধ্যে মুক্তামালার ন্যায় আপন গ্রপিত হইয়া যায়। মাধাই মহাপাষণ্ড হইলেও, কেবল সাধুর সঙ্গগুণে সে স্বৰ্গীয় শক্তি লাভ করিয়াছিল। মহাপ্রভু বলিয়াছিলেন—

“আয়রে মাধাই! কাছে আয়,
হরিনামের বাতাস লাণ্ডক গায়।”

 জলীয় বাতাসে যেমন জল-কণিকা প্রবাহিত হয়, সেইরূপ সাধুর গায়ের বাতাসে ভাগবতী শক্তি ও ভগবদ্ভক্তিরূপ সুধাসিন্ধুর বিন্দুরাশি প্রবাহিত হইতে থাকে। যখন নিদাঘের নিদারুণ সন্তাপে বৃক্ষগুলি জীবন্মৃতবৎ হইয়া যায়, এমন সময় বর্ষার বিপুল বারিধারা তাহাদিগকে নাহাইয়া, ধোয়াইয়া নির্ম্মল ও সবল করে, এবং মূলদেশে রসের সঞ্চার করিয়া থাকে; ত্রিতাপতপ্ত জীব, তুমিও মস্তক অবনত করিয়া সাধুসঙ্গরূপ নিস্তরঙ্গ, নির্ম্মলনীর সরোবরে অবগাহন করিয়া লও, তোমার হৃদয়-তরুর গ্রন্থিতে গ্রন্থিতে সন্ধিতে সন্ধিতে, নবীন সুধা-রসের সঞ্চার হইবে, তুমি সাধুসঙ্গের অমৃতময় ফল লাভ করিবে।

 সাধুহৃদয় মহোদয়গণ! সাধুসঙ্গের আশ্চর্য্য প্রভাবের একটি প্রকৃত ঘটনার দৃষ্টান্ত বলিতেছি। রেওয়া রাজ্যের পূর্বতন রাজার একজন স্থপণ্ডিত কুলগুরু ছিলেন; তাহার পুত্র শাস্ত্র-সুশিক্ষা লাভ করিবার জন্য রাজকীয় ব্যবস্থায় কাশীতে সমাগত হ’ন। বুদ্ধিমান বিদ্যার্থী অল্পদিনের মধ্যেই ব্যাকরণ, কাব্য, কোষ, দর্শন-শাস্ত্রাদি-পাঠ, সমাপ্ত করিয়া রেওয়ায় উপস্থিত হইলেন। রাজার সহিত সাক্ষাৎ করিয়া তিনি বলিলেন, আপনার ব্যবস্থায় আমি কৃতবিদ্য হইয়া আসিয়াছি; রাজসভার পণ্ডিতমণ্ডলীর সহিত আমি শাস্ত্রার্থ বিচার করিব, আপনি আমার শাস্ত্রশিক্ষার পরিচয় গ্রহণ করুন। রাজা বলিলেন, তুমি শ্রীমদ্ভগবদগীতা পাঠ করিয়া আসিয়াছ কি? গুরুপুত্র উত্তর করিলেন