পাতা:তত্ত্ববিচার.pdf/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তত্ত্ববিচার।
১৭

ব্যক্তি যদি কখনও কিছু অন্ধকে দেখাইয়া দেন, অন্ধ তাহা দেখিতে পাইবে কেন? শুনিয়া শিখিয়া কি দেখার সাধ মিটিয়া থাকে? অন্ধের দেখিবার আকাঙ্ক্ষা আছে, কিন্তু দেখিতে পায় না। অন্ধ চক্ষুষ্মানের উপদেশ মতে পথ চলিয়া থাকে, আহার ব্যবহার করিয়া থাকে; বলিতে কি, অন্ধ নিজ জীবনের সমস্ত কার্য্যই পরের উপদেশে সম্পন্ন করিয়া থাকে। অন্ধের সমস্তই প্রয়োজন, কিন্তু নিজে কিছুই করিয়া লইতে পারে না। ভাত খাইতে পারে, কিন্তু রাধিয়া লইতে জানে না; অন্ধ রান্না ভাত পাইলে খাইয়া তৃপ্ত হয় মাত্র। অন্ধ বড় গরিব ও পপের ভিখারী। চক্ষুষ্মানের কৃপা ন হইলে অন্ধের কোন কর্ম্মই সিদ্ধ হয় না। যিনি দীনদয়াল, তিনি অন্ধশালা নির্ম্মাণ করিয়া দেন; তিনিই অন্ধের জন্য অন্ন-সত্র খুলিয়া সংকীর্ত্তি রক্ষা করিয়া থাকেন।

 জগতে যত অন্ধকে দেখিতে পাই, সকলেই এক এক গাছি যষ্টি অবলম্বন করিয়া পথ চলিয়া থাকে। খাইবার স্থানে, শুইবার স্থানে, বসিবার স্থানে, অথবা যে কোন স্থানে যাউক না কেন, অন্ধ আপনার যষ্টি ছাড়িয়া যায় না। যষ্টিই অন্ধের পরমাবলম্বন ও পরমোপকারী বন্ধু; অন্ধের পিতামাত মরিয়া গেলেও চলিতে পারে, কিন্তু যষ্টিহারা হইলে অন্ধ আর এক পা ও চলিতে পারে না। যষ্টি হয়ত হস্তিদস্তে বিনির্ম্মিত, মণিমুক্তা-বিজড়িত, স্বর্ণখচিত না হইতে পারে; উহা অল্পমূল্যের বংশখণ্ড হইলেও অন্ধের পক্ষে অমূল্য জিনিষ। আমরা অন্ধ, স্ব রূপ-দর্শনে অপটু; সুতরাং জীবনের পথে চলিতে হইলে আমরাই বা যষ্টি অবলম্বন না করিয়া কিরূপে যাইতে পারে। সাধারণ অন্ধত যষ্টিকে অবলম্বন করিয়া গন্তব্যপথে ধীরে ধীরে গমন করিয়া থাকে। আমরা যে আজানিত পথে যষ্টি না পাইয়া যাইতে পারব, ইহা ত সম্ভব নয়। আমাদিগকে যে পথে যাইতে হইবে, তাহা আমরা স্বয়ং