পাতা:তরুণের আহ্বান - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তোমরা ওঠো জাগো

মাননীয় অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতি মহাশয় ও সমবেত ছাত্রমণ্ডলী:

 আপনারা আজ কিসের জন্য এই ছাত্রসভায় আমায় আহ্বান করিয়াছেন তাহা আপনারাই জানেন। তবে এই সভায় আসিবার প্রবৃত্তি বা সাহস যে আমার হইয়াছে তাহার একমাত্র কারণ এই যে আমি মনে করি আমি আপনাদের মতোই একজন ছাত্র; “জীবনবেদ” আমি অধ্যয়ন করিয়া থাকি এবং বাস্তব জীবনের কঠিন আঘাতে যে জ্ঞানের উম্মেষ হয় সেই জ্ঞান আহরণে আমি এখন রত।

জাতির আদর্শ

প্রত্যেক ব্যক্তির বা জাতির একটা ধর্ম বা আদর্শ (ideal) আছে। সেই ideal বা আদর্শকে অবলম্বন ও আশ্রয় করিয়া সে গড়িয়া উঠে। সেই ideaকে সার্থক করাই তাহার জীবনের উদ্দেশ্য, সেই ideal বা আদর্শকে বাদ দিলে তাহার জীবন অর্থহীন নিষ্প্রয়োজন হইয়া পড়ে। দেশ ও কালের গণ্ডীর মধ্যে আদর্শের ক্রমবিকাশ বা অভিব্যক্তি একদিনে বা এক বৎসরে হয় না। ব্যক্তির জীবনে সাধনা যেরূপ বহুবৎসরব্যাপী হইয়া থাকে, জাতির জীবনেও সেইরূপ সাধনার ধারা পরুষানুক্রমে চলিয়া আসে। তাই মনীষীরা বলিয়া থাকেন যে আদর্শ একটা প্রাণহীন গতিহীন বস্তু নয়। তার বেগ আছে, গতি আছে, প্রাণ-সঞ্চারিণী শক্তি আছে।

আমাদের যুগধর্ম

যে আদর্শ আমাদের সমাজে গত একশত বৎসর ধরিয়া আত্মবিকাশের চেষ্টা করিতেছে আমরা তার পরিচয় সবসময়ে না পাইতে পারি। যে চিন্তাশীল, যাহার অন্তদৃষ্টি আছে শুধু সে ব্যক্তি বাহ্যঘটনা-পরম্পরার অন্তরালে অন্তঃসলিলা ফল্গুনদীরূপা এই আদর্শের ধারাকে ধরিতে পারে। এই আদর্শই আমাদের যুগধর্ম— the idea of the age. ইহা উপলব্ধি সব সময়ে হয় না বলিয়া আমরা প্রায়শ ভ্রান্ত পথের দিকে আকৃষ্ট হই— ভ্রান্ত গুরুর অনুবর্তী হই। হে ছাত্রমণ্ডলী, যদি জীবন গঠন করিতে চাও—তবে ভ্রান্ত গুরু ও

৯৯