পাতা:তরুণের আহ্বান - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কেশবচন্দ্রের যুগ

ভারতকে জাগাইবার জন্য মনোরাজ্যে যে বিপ্লব রামমোহন প্রবর্তিত করিলেন, পরবর্তী যুগে সে বিপ্লব সমাজের মধ্যে আসিয়া পড়িল। কেশবচন্দ্রের যুগে সমাজ-সংস্কারের কাজ দ্রুত গতিতে চলিতে লাগিল। ব্রাহ্মসমাজের নূতন বাণীর প্রভাবে সমগ্র দেশে নবজাগরণ আরম্ভ হইল। কিছুকাল পরে যখন ব্রাহ্মসমাজ হিন্দু সমাজ হইতে পৃথক হইয়া পড়িল এবং হিন্দু সমাজের মধ্যেও জাগরণের সূচনা হইল তখন ব্রাহ্মসমাজের প্রভাব ক্রমশ হ্রাস পাইতে লাগিল।

স্বামীজির বাণী

রামমোহনের যুগ হইতে বিভিন্ন আন্দোলনের ভিতর দিয়া ভারতের মুক্তির আকাঙ্ক্ষা ক্রমশ প্রকটিত হইয়া আসিতেছে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে এই আকাঙ্ক্ষা চিন্তারাজ্যে ও সমাজের মধ্যে দেখা দিয়াছিল কিন্তু রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে তখনো দেখা দেয় নাই কারণ তখনো ভারতবাসী পরাধীনতার মোহনিদ্রায় নিমগ্ন থাকিয়া মনে করিতেছে যে ইংরেজের ভারত-বিজয় একটা দৈব ঘটনা বা divine dispensation। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে এবং বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে স্বাধীনতার অখণ্ড রূপের আভাস রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের মধ্যে পাওয়া যায়। “Freedom, Freedom is the song of the Soul।” এই বাণী যখন স্বামীজির অন্তরের রুদ্ধ দুয়ার ভেদ করিয়া নির্গত হয় তখন তাহা সমগ্র দেশবাসীকে মুগ্ধ ও উন্মত্তপ্রায় করিয়া তোলে। তাঁহার সাধনার ভিতর দিয়া, আচরণের ভিতর দিয়া, কথা ও বক্তৃতার ভিতর দিয়া—এই সত্যই বাহির হইয়াছিল।

 স্বামী বিবেকানন্দ মানুষকে যাবতীয় বন্ধন হইতে মুক্ত হইয়া খাঁটি মানুষ হইতে বলেন, অপরদিকে সর্বধর্ম সমন্বয় প্রচার ভারতের জাতীয়তার ভিত্তিরূপে সংস্থাপন করেন। রামমোহন রায় মনে করিয়াছিলেন যে সাকারবাদ খণ্ডন কবিয়া, বেদান্তের নিরাকারবাদ প্রতিষ্ঠা করিয়া তিনি জাতিকে একটা সার্বভৌমিক ভিত্তির উপর দাঁড় করাইতে পারিবেন। ব্রাহ্মসমাজও সেই পথে চলিয়াছিল কিন্তু ফলে হিন্দু সমাজ যেন আরো দূরে সরিয়া গেল। তারপর বিশিষ্টাদ্বৈতবাদমূলক বা দ্বৈতাদ্বৈতবাদমূলক সত্য প্রচারের দ্বারা এবং সকল-মত-সহিষ্ণুতার শিক্ষা দিয়া রামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দ জাতিকে একতাসূত্রে গাঁথিবার চেষ্টা করিলেন।

১০১