পাতা:তরুণের আহ্বান - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

জনসাধারণের জন্য। “Swaraj for the masses”—এই আদর্শ তিনি নিখিল ভারতীয় শ্রমিক সভায় দেশবাসীর সম্মুখে উপস্থাপিত করেন।

 আর-একটা বাণী আমরা দেশবন্ধুর জীবনে পাই। এই যে মানুষের জীবন—জাতির এবং ব্যক্তির জীবন— ইহা একটি অখণ্ড সত্য। এই জীবনকে দ্বিধা বা বহুধা বিভক্ত করা যায় না। মানুষের প্রাণ যখন জাগে তখন তাহা সব দিক দিয়া জাগে, সর্বক্ষেত্রে তাহার নবজীবনের লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়। বিশ্বজগৎ তথা মনুষ্যজীবন— বৈচিত্র্যপূর্ণ। এই বৈচিত্র্যের লোপ করিলে জীবনের বিকাশ হইবে না—বরং আমরা মরণের বা ধ্বংসের দিকে চলিব। তাই বৈচিত্র্যের মধ্য দিয়া, “বহুর” মধ্য দিয়া ব্যক্তির এবং জাতির বিকাশ সাধন করিতে হইবে।

 বর্তমান যুগে রামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দ আধ্যাত্মিক জগতে “এক” এবং “বহুর” মধ্যে যে সমন্বয় স্থাপন করিয়াছিলেন— সে সমন্বয় দেশবন্ধু জাতির জীবনে এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে সাধন করিয়াছিলেন বা করিতে প্রয়াস পাইয়া ছিলেন। দেশবন্ধু “শিক্ষার মিলনে” যেরূপ বিশ্বাস করিতেন “শিক্ষার বিরোধে”ও তদ্রূপ বিশ্বাস করিতেন—এক কথায় তিনি Federation of cultures-এ বিশ্বাস করিতেন এবং ভারতের মৌলিক একতায় প্রগাঢ় বিশ্বাসী হইলেও বাংলার বৈশিষ্ট্যেও বিশ্বাসবান ছিলেন। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তিনি ভারতবর্ষের centralised State অপেক্ষা federal State বেশি পছন্দ করিতেন।

স্বাধীনতার অখণ্ড রূপ

যে সর্বাঙ্গীণ বিকাশে দেশবন্ধু এত বিশ্বাসী ছিলেন তাহাই এই যুগের সাধনা। এই সাধনা সার্থক করিতে হইলে স্বাধীনতার অখণ্ডরূপ আগে দর্শন করা চাই। আদর্শের পরিপূর্ণ উপলব্ধি না হইলে মানুষ কর্মক্ষেত্রে কখনো জয়যুক্ত হইতে পারে না। তাই আজ সারা ভারতকে এবং বিশেষ করিয়া ভারতের তরুণ সমাজকে বলিয়া দিতে হইবে যে, যে-স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন আমরা দেখি সে রাজ্যে সকলে মুক্ত— ব্যক্তি মুক্ত, সমাজও মুক্ত, সেখানে মানুষ রাষ্ট্রীয় বন্ধন হইতে মুক্ত, সামাজিক বন্ধন হইতে মুক্ত এবং অর্থের বন্ধন হইতে মুক্ত। রাষ্ট্র, সমাজ ও অর্থনীতি—এই ত্রিতাপ হইতে আমরা মানবজাতিকে, দেশবাসীকে মুক্ত করিতে চাই।

১০৩