পাতা:তরুণের আহ্বান - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

স্বাধীনতার কথা ভাবিলে অনেকে দেখিতে পান উচ্ছৃঙ্খলতার বিভীষিকা। কিন্তু আমি উচ্ছৃঙ্খলতার ভয়ে ভীত নহি। মানুষের মধ্যে যদি ভগবান বিরাজ করেন, অথবা মানুষের মধ্যে যদি মানবতা থাকে; যদি ভগবান সতা হন—যদি মানুষ সত্য হয়—তবে মানুষ চিরকাল পথভ্রষ্ট বা ভ্রান্ত হইতে পারে না। স্বাধীনতার মদিরা পান করিয়া যদি আমরা কিছু সময়ের জনা অপ্রকৃতিস্থ হই তাহা হইলেও অচিরে আমরা আত্মস্থ হইব। আমাদের স্বাধীনতা প্রাপ্তির যে দাবি— তাহা ভুলভ্রান্তি করিবার অধিকারের দাবি বৈ আর-কিছু নয় (the right to make mistakes), অতএব উচ্ছৃঙ্খলতার বিভীষিকা না দেখিয়া মুক্তিপথে আগুয়ান হও; নিজের মানবতায় বিশ্বাসী হইয়া মনুষ্যত্ব লাভের চেষ্টায় সর্বদা নিরত হও।

 আজ দেশের মধ্যে তিনটি বড়ো সম্প্রদায় একপ্রকার নিশ্চেষ্ট হইয়া পড়িয়া আছে—নারী সমাজ, উপেক্ষিত তথাকথিত অনুন্নত সমাজ এবং কৃষক ও শ্রমিক সমাজ। ইহাদের নিকট গিয়া বলো- তোমরাও মানুষ; মনুষ্যত্বের পূর্ণ অধিকার তোমরাও পাইবে। অতএব ওঠো, জাগো, নিশ্চেষ্টতা পরিহার করিয়া নিজের প্রাপ্য অধিকার করিয়া লও।

অখণ্ড মুক্তির উপাসক হও

হে বাংলার ছাত্র ও তরুণ সমাজ। তোমরা পরিপূর্ণ ও অখণ্ড মুক্তির উপাসক হও। তোমরাই ভবিষ্যৎ ভারতের উত্তরাধিকারী; অতএব তোমরাই সমস্ত জাতিকে জাগাইবার ভার গ্রহণ করো। তোমাদের প্রত্যেকের মধ্যে আছে— অনন্ত, অপরিসীম শক্তি। এই শক্তির উদ্বোধন করো এবং এই নবশক্তি অপরের মধ্যে সঞ্চার করো; তোমাদের নিকট নূতন স্বাধীনতামন্ত্রে দীক্ষিত সমস্ত জাতি আবার বাঁচিয়া উঠুক!

 যেদিন ভারত পরাধীন হইয়াছে—সেই দিন হইতে ভারত সমষ্টিগত সাধনা (Collective Sadhana) ভুলিয়া ব্যক্তিত্বের বিকাশের দিকে সমস্ত শক্তি নিয়োগ করিয়াছে! ফলে কত শত মহাপুরুষ এই দেশে আবিভর্ভূত হইয়াছেন অথচ তাঁহাদের আবির্ভাব সত্ত্বেও জাতি আজ কিরূপ শোচনীয় অবস্থা প্রাপ্ত হইয়াছে। জাতিকে আবার বাঁচাইতে হইলে সাধনার ধারা আবার অন্য দিকে পরিচালিত করিতে হইবে। জাতিকে বাদ দিয়া ব্যক্তিত্বের সার্থকতা নাই—এ কথা আজ সকলকে হৃদয়ঙ্গম করিতে হইবে।

১০৫