পাতা:তরুণের আহ্বান - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 আমাদের জাতির বহু লোক—পুরুষানুক্রমে বহু জ্ঞান ও সম্পদ আহরণ করিয়া আসিতেছে। এতদিন পর্যন্ত সমস্ত জাতি সে জ্ঞান ও সে সম্পদের অধিকারী হইতে পারে নাই। আজ হইতে তাহাকে অধিকারী করিয়া দিতে হইবে। সকলকে বুঝাইয়া দিতে হইবে, যে-ভারতের প্রতিষ্ঠা আমরা করিতে চাই— সেখানে জাতিধর্ম নির্বিশেষে সকলের সমান অধিকার, সমান দাবি, সমান সুযোগ। যেদিন সমস্ত দেশ এ কথা বুঝিবে সেদিন সমস্ত সমাজ মুক্ত হইবার জন্য অধীর, উম্মত্ত হইবে।

অসবর্ণ বিবাহের প্রয়োজনীয়তা

আর একটি কথা বলিয়া আমার বক্তব্য শেষ করিব। জাতির রক্তস্রোত যেন ক্ষীণ হইয়া আসিতেছে। এখন চাই নূতন রক্ত। ভারতের ইতিহাস পড়িয়া দেখ— বহুবার রক্ত-সংমিশ্রণ ঘটিয়াছে। এই রক্ত-সংমিশ্রণের ফলে ভারতীয় জাতি বার বার মৃত্যুমুখে পতিত হইয়া পুনর্জীবন লাভ করিয়াছে। যাঁহারা বর্ণসঙ্করে ভয় করেন তাঁহারা আমাদের জাতির ইতিহাস জানেন না এবং তাঁহারা মানব-বিজ্ঞান (anthropology) সম্পর্কে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ। আজ অসবর্ণ বিবাহ প্রবর্তনের দ্বারা যথেষ্ট রক্ত-সংমিশ্রণ ঘটিবে এবং এই রক্তসংমিশ্রণের ফলে জীবনীশক্তি আমরা ফিরিয়া পাইব।

সকলকে জাগাও

ভ্রাতৃমণ্ডলী। আজ আমার বক্তব্য এইখানে শেষ করিব। সাম্যবাদ ও স্বাধীনতামন্ত্র প্রচার করিবার জন্য তোমরা গ্রামে গ্রামে ছড়াইয়া পড়ো। স্বাধীন ভারতের যে দৃশ্য তোমাদের সম্মুখে ধরিলাম তাহা সমগ্র দেশবাসীর সম্মুখে ধরো। স্বাধীনতার পূর্ব স্বাদ নিজের অন্তরে পাইলে সকলেই পাগল হইয়া উঠিবে। এই স্বাদ— এই অনুভূতি নিজের অন্তরে আগে অবশ্য পাওয়া চাই। নিজে অন্তরে এই আলোক জ্বালো— সেই দীপ হস্তে লইয়া দেশবাসীর দ্বারবর্তী হও। যাও চীনা ছাত্রদের মতো—রুশ তরুণদের মতো— চাষীর পর্ণ কুটীরে, মজুরদের আবর্জনাপূর্ণ ভগ্নগৃহে। তাহাদের জাগাও। আর যাও—মাতৃজাতির সমীপে। যাঁহারা শক্তিরূপিণী অথচ সমাজের চাপে আজ হইয়াছেন ‘অবলা’—তাঁদেরও জাগাও—বলো—

১০৬