পাতা:তরুণের আহ্বান - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পদতলে শায়িত এশিয়াকে দেখিয়া যিনি ব্যথা ও অপমান অনুভব না করেন। কিন্তু এশিয়া যে চিরদিন এমন হতমান অবস্থায় ছিল এ-হেন ধারণা আপনারা চিরতরে পরিহার করুন। আজ ইউরোপ সভ্যতার শীর্ষদেশে রহিয়াছে— কিন্তু এমন দিন ছিল যখন এশিয়াই ছিল সভ্যতার চূড়ায়। ইতিহাস বলিতেছে অতীত যুগে এশিয়া ইউরোপের বিরাট অংশ দখল করিয়া লইয়াছিল, সে সময় এশিয়ার নামে ইউরোপ ছিল আতঙ্কগ্রস্ত। এখন অবস্থা পালটাইয়াছে। কিন্তু নিয়তিচক্র আবার ঘুরিতেছে। তাই নৈরাশ্যের কোনো কারণ নাই। বর্তমান মুহূর্তে এশিয়া দাসত্বের নিগড় ভাঙিবার কাজে নিযুক্ত হইয়াছে। সেদিন দূরে নাই যখন নবজাগ্রত এশিয়া অতীতের তমিস্রালোক হইতে শক্তি ও গৌরবে সমুদ্‌ভাসিত হইয়া উঠিয়া দাঁড়াইবে, স্বাধীন জাতিসমূহের সভামধ্যে তাহার সংগত স্থান গ্রহণ করিবে।

 পশ্চিমী বাগ্‌বিশারদেরা অমর প্রাচীকে “পরিবর্তনহীন” বলিয়া দোষ দিতেছে:— একসময় যেমন তুরষ্ককে তাহারা বলিত ইউরোপের রুগ্‌ণলোক। কিন্তু তুরষ্ক সম্পর্কে আর এ কথা যেমন খাটে না, এশিয়া সম্পর্কেও ঐরকম সাধারণ মন্তব্য আর করা চলে না। জাপান হইতে তুরস্ক পর্যন্ত এবং সাইবেরিয়া হইতে সিংহল পর্যন্ত সমগ্র প্রাচী আলোড়িত হইতেছে। সর্বত্রই দেখা যাইতেছে পরিবর্তন, প্রগতি, প্রথা কর্তৃপক্ষ ও ঐতিহ্যের সঙ্গে সংঘাত। প্রাচী যতদিন পরিবর্তন কামনা না করে ততদিনই তাহার পরিবর্তন ঘটিবে না। কিন্তু সে যখন চলিষ্ণু হইবার সংকল্প করিবে তখন পাশ্চাত্য জাতিগুলির চেয়ে দ্রুততর গতিতে সে আাগাইয়া চলিবে। বর্তমানে এশিয়ায় তাহাই ঘটিতেছে।

 আমাদের মাঝে মাঝে প্রশ্ন করা হয়, এশিয়ায় বিশেষত ভারতবর্ষে আমরা যে কর্মচাঞ্চল্য ও উত্তেজনা দেখিতেছি তাহা কি প্রকৃত জীবনের লক্ষণ, নাকি বহিরাগত প্রেরণার প্রতিক্রিয়া মাত্র। মৃত জীবনকোষও বহিরাগত প্রেরণায় সাড়া দেয়। মৃত মাংসপেশীর সংকোচন-প্রসাবণের মতোই আমাদের আন্দোলনও উত্তেজনামাত্র কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া দরকার। আমার বিশ্বাস জীবনের লক্ষণ সৃষ্টিশীলতায়। এবং যখন আমরা দেখিতেছি বর্তমানকালের আন্দোলনগুলির মধ্যে মৌলিকতার ও সৃজনশীল প্রতিভার স্বাক্ষর বর্তমান, তখন আমরা নিশ্চিত হইতে পারি জাতি হিসাবে সত্যই আমরা বাঁচিয়া আছি জাতীয় জীবনের নানা ক্ষেত্রে আমাদের নবজাগরণ যথার্থই আত্মার জাগরণ।

১১৫