পাতা:তরুণের আহ্বান - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

স্বাধীন ভারতের উত্তরাধিকারী

মধ্যপ্রদেশ ও বেরার ছাত্র-সম্মেলনে অংশ গ্রহণ করিতে পারা আমার পক্ষে খুবই আনন্দদায়ক। এই ধরনের একটি ছাত্র সম্মেলনে যোগ দিতে পারা শুধু আনন্দেবই নয়, পরম সৌভাগ্যের বিষয়ও বটে। তোমাদের স্তুতির জন্য বলিতেছি না, ইহা আমার অন্তরের গভীরতম কথা। ইহাতে কোনো অতিরঞ্জন নাই। কেননা ছাত্রদের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসিলেই আমার মনের দুয়ার খুলিয়া যায়। সকল দ্বিধা-সংকোচ দূর হয়, আমার মনের দুয়ার খুলিয়া যায়। সকল দ্বিধা-সংকোচ দূর হয়, আমার জীবনের চরম সত্যগুলিকে অকপটে প্রকাশ করিতে পারি। প্রায় এক দশক আগে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গন ছাড়িয়া বাহির হইয়াছি। তবু আজও আমি নিজেকে ছাত্র ভিন্ন আর কিছু ভাবিতে পারি না। শুধু প্রভেদ এই তোমাদের বিশ্ববিদ্যালয় অপেক্ষা বর্তমানে এক বৃহত্তর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আমি— উহাকে সহজভাবেই ‘জীবনের বিশ্ববিদ্যালয়’ বলা যাইতে পারে। আমি জীবন সংগ্রামে নিযুক্ত এবং তাহা হইতে নিত্যনূতন বাণী ও অভিজ্ঞতা আহরণ করিতেছি। আদর্শবাদ এবং কল্পনাপ্রসূত ভাবপ্রবণতা—যাহা ছাত্রদের বৈশিষ্ট্য—আমাকে এখনো সম্পূর্ণ রূপে বর্জন করে নাই। সুতরাং তোমাদের অভাব ও ক্ষোভ, আনন্দ ও বেদনা, আশা ও আকাঙ্ক্ষা আমার পক্ষে অনুভব করা অসম্ভব নয়।

 তবুও এই সম্মেলনে সভাপতিত্ব করাব যোগ্যতা আমার আদৌ আছে কিনা সে সম্বন্ধে গুরুতর সংশয় রহিয়াছে। ছাত্রজীবনের আচরণের দিক হইতে আমাকে বিচার করিলে আশঙ্কা হয় আমাকে খুব সৎ কিবা নিষ্কলঙ্ক পাইবে না। সেদিনের কথা আমার সুস্পষ্ট মনে আছে, যেদিন অধ্যক্ষমহাশয় আমাকে তাঁহার সমক্ষে ডাকাইয়া আনিয়া কলেজ হইতে বহিষ্কারের আদেশ জানাইয়া দিলেন। তাঁহার কথাগুলি এখনো আমার কানে বাজিতেছে: ‘তুমিই এই কলেজের ছাত্রদের মধ্যে সব চাইতে নষ্টের গোড়া।’

 আমার জীবনের সে এক পরম স্মরণীয় দিন। নানাদিক দিয়া বিচার করিলে বলা যায় সেদিন হইতে আমার জীবনের এক নূতন অধ্যায় খুলিয়া গেল। সেদিন আমি প্রথম উপলব্ধি করিলাম কোনো মহান আদর্শের জন্য নির্যাতন ভোগের পর কী স্বর্গীয় আনন্দ আমাদের জন্য অপেক্ষা করিয়া

১২০