পাতা:তরুণের আহ্বান - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বিশ্বের ভাণ্ডারে এখনো বৃহত্তর ও গৌরবোজ্জ্বল কিছু তাহার দান করিবার রহিয়াছে।

 ভারতবর্ষের চরম লক্ষ্য কী? তাহার জনসমাজের কার্যক্রম কী? প্রথমত তাহাদের আত্মরক্ষা করিতে হইবে, তারপর বিশ্বের সভ্যতার ভাণ্ডারে কিছু দান করিতে হইবে। অজস্র বাধা সত্ত্বেও, অতীতে ভারতবর্ষের অবদান অকিঞ্চিৎকর নহে। সুতরাং আমরা অনায়াসে অনুমান করিতে পারি, যদি বাধাহীনভাবে নিজের পথে বিকাশের স্বাধীনতা থাকিত, তবে মানব-জাতির সংস্কৃতি ও সভ্যতার ক্ষেত্রে ভারত কী পরিমাণ দান করিতে পারিত।

 আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যদি আমাদের দেশবাসীর মনে অন্তহীন উদ্দীপনা ও অনুপ্রেরণা সঞ্চার করিতে পারিতাম ভারতবর্ষ অবিশ্বাস্য কর্মসাধন করিয়া বিশ্বে বিস্ময় সৃষ্টি করিতে পারিত। আমাদের এই সুপ্ত জাতি একবার জাগিয়া উঠিলে প্রথম সারির অগ্রসর পাশ্চাত্যজাতিসমূহকে অনায়াসেই পিছনে ফেলিয়া যাইবে। আমাদের প্রয়োজন একটি যাদুদণ্ড যাহার স্পর্শমাত্র একটি বিচ্ছুরিত শিহরণ জীবনের সকল ক্ষেত্রে সঞ্চারিত হইয়া আত্মিক প্রস্তুতির আহ্বান জানাইবে। ফরাসী দার্শনিক বের্গস' ‘এলান ভাইটাল’ অর্থাৎ প্রেরণাদায়িনী শক্তির কথা বলিয়াছেন, ইহা সেই প্রাণশক্তি যাহা পথিবীকে কর্মসাধনার ও প্রগতির পথে প্রবর্তিত করে। আমাদের জাতীয় জীবনের প্রাণশক্তি কী হইতে পারে? স্বাধীনতা, আত্মবিকাশ অথবা আত্মোন্নয়নের জন্য নিরবচ্ছিন্ন আকূতি যাহা আমাদের মনের গভীরে নিহিত রহিয়াছে। সকল প্রকার বন্ধনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, আত্মবিকাশের জন্য বেগবান প্রবণতার অপর একটি দিক মাত্র। যদি সত্যই তোমরা বন্ধনমুক্ত হইতে চাও, বন্ধনের শৃঙ্খল ভাঙিবার জন্য দ্বিধাহীনভাবে প্রস্তুত হইতে হইবে এবং স্বাধীনতার পথে সকল অন্তরায় চুরমার করিয়া ফেলিতে হইবে। এই প্রকার বিদ্রোহে তোমাদের সাফল্য স্বাধীনতা অর্জনের মতোই প্রতিষ্ঠা পাইবে। যাহাদের আত্মসম্মানবোধ সর্বতোভাবে লুপ্ত হইযাছে, তাহাদের কথা ছাড়িয়া দিলে অবশিষ্টেরা সর্বদাই দাসত্বের জ্বালা ও অবমাননা বোধ করে। বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট সেই অনুভূতি যতই বিভিন্ন মাত্রায় অভিব্যক্ত হইয়া থাকুক-না কেন। এই অনুভূতি তীব্র হইয়া উঠিলে বন্ধন আর সহ্য করা অসম্ভব হইয়া উঠে। এই অবস্থায় পৌঁছাইলে সকল বন্ধনে অস্থির হইয়া পড়িতে হয় এবং যদি সেই অবসরে সামান্য মুক্তির স্বাদও আমরা পাই, বন্ধনমোচনের অস্থিরতা আরো বাড়িয়া উঠে। আমাদের মতো সাধারণ

১২৪