পাতা:তরুণের আহ্বান - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বুঝিতে হইবে স্ত্রী-পুরুষের স্বাধীনতার কথাই বলা হইতেছে। উচ্চবর্ণের স্বাধীনতার সহিত তথাকথিত অনগ্রসর বর্ণের স্বাধীনতাকেও স্বীকৃতি দিতে হইবে। স্বাধীনতার সংজ্ঞায় বিত্তবান ও দরিদ্রের, নবীন ও প্রবীণের এবং সকল ধর্মাবলম্বীর স্বাধীনতাই স্বীকৃত। সকল শ্রেণীর ও ব্যক্তির, সংখ্যাগুরু বা সংখ্যালঘু যে-কোনো সম্প্রদায়েরই তাহারা হউক-না কেন, বলা বাহুল্য বিনা বৈষম্যে তাহাদের স্বাধীনতা স্বীকৃত হইবে। এই দৃষ্টিকোণ হইতে দেখিলে স্বাধীনতা ও সমতা একার্থক এবং আমরা জানি সমতাবোধ আমাদের সৌভ্রাত্রের অধিকারী করিয়া তোলে।

 কোনো সমাজ বন্ধনমুক্ত হইবাব পূর্বে, সেই সমাজে আইন ও সামাজিক বিষয়ে নারীদের প্রতি পুরুষের সমানাধিকার প্রসারিত হওয়া কর্তব্য। যেসকল সামাজিক রীতি-নীতি ও ঐতিহ্য কোনো কোনো শ্রেণী ও ব্যক্তির স্থান সমাজে নামাইযা দিয়াছে, নির্মমভাবে সেগুলি ধ্বংস করিতে হইবে। ধনী ও দরিদ্রের সামাজিক মর্যাদার প্রভেদের অবসান করিতে হইবে। সমাজ-প্রগতির পথে নির্বিশেষে সকল প্রকার অবরোধ বর্জন করিতে হইবে। শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রতিটি ব্যক্তিকে সমান সুযোগ দিতে হইবে। যুবক বলিয়া যৌবনশক্তিকে তুচ্ছজ্ঞান করা চলিবে না। আমাদের দেশে শেষ পর্যন্ত তরুণ এবং তরুণীদের উপর সকল প্রকার সমাজ-সংস্কার এবং সরকার পরিচালনার দায়িত্ব অর্জন করিতে হইবে। সামাজিক, রাজনৈতিক অথবা অর্থনৈতিক—প্রতি ক্ষেত্রে আমাদের সকলের সমানাধিকার থাকিবে, সামান্যতম বৈষমাও অনুমোদন করা যাইবে না। সকলের জন্য সমান অধিকার ও সমান সুযোগ, সম্পত্তির সমান বণ্টন, বৈষম্যমূলক সকল সামাজিক আইনের পরিহার, জাতিভেদ প্রথা বিলোপ এবং বৈদেশিক শাসন হইতে দেশের মুক্তি-সাধন— এই মৌলিক ভিত্তিভূমির উপর আমাদের বাঞ্ছিত নূতন সমাজ গড়িয়া তুলিতে হইবে।

 বন্ধুগণ, তোমাদের মনে হইতে পারে এগুলি আকাশ-কুসসুমে পর্যবসিত হইবে। তোমরা কেহ কেহ আমাকে হয়তো বাস্তবসম্পর্ক বিহীন দিবা-স্বপ্নে মশগুল বলিয়া ভাবিবে। যদি সেই কারণে আমাকে বর্জন কর তবে আমি অসহায়। এই অপবাধ আমাকে মানিয়া লইতে হইবে এবং প্রকাশ্যেই স্বীকার করিতে হইবে যে বাস্তবিকই আমি দিবাস্বপ্নবিলাসী। আমি কোন্ স্বপ্নে বিভোর একের পর এক তাহা তোমাদের সম্মুখে উদ্ঘাটিত করিয়াছি। আমার নিকট সেগুলি বাস্তবে মণ্ডিত বলিয়া প্রতিভাত হইতেছে। এই স্বপ্নগুলি

১২৭