পাতা:তরুণের আহ্বান - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বলা প্রয়োজন—সেটা এই যে, যুব-সমিতি কংগ্রেসের বা সেবা-সমিতির শাখাবিশেষ নয়। যুব-আন্দোলনের উদ্দেশ্য—নূতনের সন্ধান আনা, নূতন সমাজ, নূতন রাষ্ট্র, নূতন অর্থনীতির প্রবর্তন করা, মানুষের মধ্যে নূতন ও উচ্চতর আদর্শ উদ্বুদ্ধ করিয়া তাহাকে মনুষ্যত্বের উচ্চতর সোপানে লইয়া যাওয়া, এই আকাঙ্ক্ষা যাহার মধ্যে জাগিয়াছে, সে ব্যক্তি নূতনের জন্য, মহত্তর জীবনের জন্য পাগল হইয়াছে— সে বর্তমান ও বাস্তবের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী না হইয়া পারে না। এই অশান্ত, অসন্তুষ্ট, বিদ্রোহী মন যার আছে—যে ব্যক্তি বর্তমান ও বাস্তবের অবগুণ্ঠন সবাইয়া মহত্তর জীবনের দৃষ্টি ও আস্বাদ পাইয়াছে— সেই ব্যক্তি যুব-আন্দোলনের অর্থ হৃদয়ঙ্গম করিয়াছে এবং যুব-সমিতি গঠনের অধিকারী হইয়াছে।

 পূর্বেকার সব আন্দোলনের দ্বারা যদি আমাদের অন্তরের ক্ষুধা মিটিত এবং জাতীয় জীবনের সব প্রয়োজন সিদ্ধ হইত তাহা হইলে যুব-আন্দোলন কোনোদিন জন্মিত না। কিন্তু দৃষ্টির সংকীর্ণতার দরুনই হউক অথবা প্রচেষ্টার অভাবের দরুনই হউক—তাহা হয় নাই। তরুণ প্রাণ বহুদিন যাবৎ অপরের স্কন্ধে আপনার ও আপনার জাতির সব দায়িত্ব চাপাইয়া যখন শেষে দেখিল যে তাহার আকাঙ্ক্ষা ও উদ্দেশ্য পূর্ণ হইল না, তখন সে আর নিশ্চিন্ত থাকিতে পারিল না। সব ক্লৈব্য ত্যাগ করিয়া সে তখন স্থির করিল, একবার সমস্ত দায়িত্ব নিজের হাতে লইয়া দেখিবে ফলাফল কী হয়। এ বিশ্বাস তাহার হইল যে কল্যাণকৃৎ কখনো দুর্গতি-প্রাপ্ত হইবে না (“নহি কল্যাণকৃৎ কশ্চিৎ দংগতিং তাত গচ্ছতি”) এবং সঙ্গে সঙ্গে এ বিশ্বাসও তাহার হইল যে ভরসা করিয়া এই ভার গ্রহণ করিলে পরিণাম কখনো অশউভ হইবে না; জয়লাভ করিলে সে বসুন্ধরা ভোগ করিতে পারিবে এবং জয়ের পূর্বে মৃত্যুমুখে পতিত হইলে স্বর্গরাজ্যে স্থান পাইবে— (হতো বা প্রাপ্‌সাসি স্বর্গং, জিত্বা বা ভোক্ষ্যসে মহীং)।

 যুব-আন্দোলন—যুবক-যুবতীদেরই আন্দোলন। এ আন্দোলন মানুষকে, মনুষ্য সমাজকে ও মনুষ্য সভ্যতাকে জরা ও বার্ধক্যের হাত থেকে রক্ষা করিতে চায় এবং মানষের তারুণ্যকে অমর করিয়া রাখিতে চায়, প্রকৃতির বুকে যেরূপ ever green পাদপ পাওয়া যায় মানুষের প্রাণকেও তদ্রূপ নিত্য সবুজ করিয়া রাখা একান্ত প্রয়োজন। তাই যুগে যুগে তরুণের প্রাণ বার্ধক্যের বিরুদ্ধে, অনুকরণেচ্ছার বিরুদ্ধে, ভীরুতার বিরুদ্ধে, ক্লৈব্যের

১৩১