পাতা:তরুণের আহ্বান - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

যুব-আন্দোলনের কর্ণধাররূপে যাঁহারা কয়েক বৎসর যাবৎ দায়িত্ব লইয়া বসিয়া আছেন তাঁহারাও কি কাজ করিবার সুযোগ-সুবিধা ও কর্মক্ষেত্র পান নাই?

 বাংলাদেশে আজকাল তুমলে বাদ-বিসম্বাদ, ভোটাভুটি ও ঝগড়া-বিবাদ লাগিয়া আছে। বর্তমানে দলাদলি যে নিতান্ত শোচনীয় ব্যাপার সে-বিষয়ে কোনো সন্দেহ নাই। এই দলাদলিতে সর্বাপেক্ষা অধিক ভুগিয়া থাকি আমরা, কারণ সহানুভূতির জন্য, অর্থসাহায্যের জন্য আমাদের বার বার জনসাধারণের দ্বারস্থ হইতে হয়। ঝগড়া-বিবাদ থাকিলে আমরা সাধারণের নিকট সহানুভূতি পাই না— অর্থ তো পাই-ই না—পাই শুধু অনাবিল গালাগালি। বিবাদ-কলহ যতদিন চলিবে ততদিন আমাদের কাজকর্ম একরকম বন্ধ থাকিবে—এ কথা অত্যুক্তি নয়। সুতরাং বিবাদ মেটাইবার আগ্রহ আমাদেরই সর্বাপেক্ষা অধিক অথচ কেহ কেহ মনে করিয়া থাকেন যে, আমাদে পেশা বুঝি ঝগড়া করা এবং আমরা কাজকর্ম ফেলিয়া ইচ্ছা করিয়াই কোমর বাঁধিয়াছি ঝগড়া করিতে। কংগ্রেস একটা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান—কংগ্রেস Social Service League-এর নামান্তর নহে। রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে বিভিন্ন লোকের বিভিন্ন আদর্শ থাকা স্বাভাবিক এবং কর্ম পদ্ধতি সম্বন্ধে বিভিন্ন লোকের বিভিন্ন মত থাকা অনিবার্য। মত ভিন্ন হইলে অনেক সময় পথও ভিন্ন হইয়া থাকে। অতএব ব্যক্তিগত ঝগড়া না থাকিলেও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে মতানৈক্য প্রায়ই দেখিতে পাওয়া যায়। মতানৈক্য অনেক সময় মনান্তরে পরিণত হয় এবং তার উপরে যখন ব্যক্তির আত্মপ্রতিষ্ঠা লাভের আকাঙ্ক্ষা জাগিয়া উঠে তখন দলাদলি আরো তিক্ত ও বিষাক্ত হইয়া উঠে। কিন্তু দলাদলির জন্য প্রকৃতপক্ষে কে দায়ী তাহা অনুসন্ধান না করিয়া কাহারো উপর দোষারোপ করা ঠিক নয়—ঝগড়া-বিবাদের জন্য যাহারা দায়ী তাহাদের অনর্থক বদনামের ভাগী করা কাহারো উচিত নয়। রাজনীতিক্ষেত্রে মধ্যে মধ্যে মতান্তর হওয়া অনিবার্য এবং মতান্তরের জন্য ঝগড়া-বিবাদ হওয়াও বোধ হয় তদ্রূপ অনিবার্য। কিছু মতান্তর যেন মনান্তরে পরিণত না হয় এবং ব্যক্তিগত নিন্দা ও গালাগালি যেন আমাদের অস্ত্র না হইয়া দাঁড়ায়—এ বিষয়ে আমাদের সাবধান ও সতর্ক হওয়া উচিত। তারপর ঐ আন্দোলনে যোগদান করিয়া আমরা যদি এতটা অসহিষ্ণু হইয়া পড়ি যে ভোটের পরিবর্তে লাঠি ও ছোরা ব্যবহার করিতে আমরা দ্বিধা বোধ না করি, তাহা হইলে দেশের দুর্দিন আসিয়াছে বুঝিতে হইবে। সেদিন কলিকাতার ছাত্র-

১৩৬