পাতা:তরুণের আহ্বান - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তরুণের আহ্বান



শ্রদ্ধাস্পদ ভদ্রমণ্ডলী ও প্রীতিভাজন তরুণ বন্ধুগণ—

আমার পরম সৌভাগ্য, আজ আমি আপনাদের সাদর সম্বর্ধনা জানাবার সুযোগ পেয়েছি। আমার এই সৌভাগ্য সম্ভাবনার মধ্যে একটা বৈচিত্র্য আছে, সেটা এই যে আমি আপনাদের আহ্বান করছি বাংলার আনন্দ-উৎসবের মধ্যে নয়, সুখ-ঐশ্বর্যের মধ্যে নয়, বিত্তমানের মধ্যে নয়, শান্তিশৃঙ্খলার মধ্যে নয়, আমি আপনাদের আহ্বান করছি। দঃখ, দারিদ্র্য, নির্যাতনের মধ্যে, অভাব, অজ্ঞানতা, অবসাদের মধ্যে, অত্যাচার, অবিচার অনাচারের মধ্যে- সবার উপর মনুষ্যত্বের পদে পদে অপমানের মধ্যে। এই তো আমাদের সাধনার ক্ষেত্র, এখানে মাধুর্য কিছু নাই, কিন্তু সৌন্দর্য আছে, এইখানে নিষ্ঠুর দুঃসহ আবির্ভাবের মধ্যে আমাদের যোগসাধনার জন্য দাঁড়াতে হবে। আনন্দ এই যে এখানে ভোলাবার কিছু নেই, অপরিসীম রিক্ততা আর অপরিমেয় ত্যাগের মধ্যে আমাদের নিজের পথ নিজে করে নিতে হবে- পশুশক্তির সাধনায় নয়, কাপরুষের ভেদনীতিতে নয়— এখানে সমাহিত আত্মসাধনার দ্বারা, সর্বস্পৃহাশূন্য পূণ্য প্রচেষ্টার দ্বারা, নরনারায়ণের নিঃস্বার্থ সেবার দ্বারা মূহ্যমান জাতির উদ্বোধন করতে হবে।

 তাই বলছিলাম এত বড়ো দুশ্চর্য সাধনায় আপনাদের আহ্বান করবার সুযোগ যে আমি পেয়েছি— এ আমার পরম সৌভাগ্য, আর আমার পরম আনন্দের কথা এই যে— আমি এই কঠিন তপস্যার জন্য সত্যের পথে আহ্বান করছি বাংলার তরণ সম্প্রদায়কে। আমি আজ দেহে, মনে, আদশে ও উদ্দেশ্যে এক হয়ে তাদের কাছে আমার প্রীতির অর্ঘ্য উপহার দিয়ে তাদের সম্বোধন করে বলি— হে আমার তরুণ জীবনের দল, তোমরাই তো যুগে ষুগে, দেশে দেশে মুক্তির ইতিহাস রচনা করে এসেছ, মুক্তিপথের নিশানধারী তোমরাই তো চিরদিন অগ্রগামী হয়ে পথ দেখিয়ে এসেছ। তোমরা যে জেগেছ, অলস বিলাস পরিহার করে তোমরা যে আজ আত্মভোলা হয়ে পথে চলবার জন্য দাঁড়িয়েছ তা আমি জানি— জানি বলেই তো তোমাদের আহ্বান করার সাহস আমার হয়েছে।