পাতা:তরুণের আহ্বান - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দেশাত্মবোধই জাতির আদর্শ

আপনাদের অনুরোধে, আপনাদের আদেশে আমি এই সভায় সভাপতিত্ব গ্রহণ করিয়াছি। চিরাচরিত প্রথা অনুসারে একজন সভাপতি না থাকিলে সভার অধিবেশন হয় না। কিন্তু আমি আশা করি আপনারা শুধু প্রথা বজায় রাখিবার জন্য আমাকে সভাপতি পদে মনোনীত করেন নাই।

 আমি আজ আপনাদেরই একজন হইয়া এই সভায় আসিয়াছি। জ্ঞানের সম্ভার আমার নাই; বয়সের গুণে মানুষ যে অভিজ্ঞতা, দূরদর্শিতা ও সাবধানতা লাভ করে—তাহাও বোধহয় আমার নাই। সুতরাং উপদেশ দিবার ধৃষ্টতা লইয়া আমি আজ এখানে আসি নাই। তবে আমি বিশ্বাস করি না যে পলিত-কেশ না হইলে মানুষ দায়িত্বপূর্ণ কার্যভার গ্রহণ করিতে সমর্থ হয় না। হইতে পারে, আজ ইংলণ্ডের প্রধানমন্ত্রী মি. র‍্যাম্‌জে ম্যাকডোনাল্ড্ বাছিয়া বাছিয়া এমন লোককে মন্ত্রী করিতেছেন যাঁহাদের বয়স পঞ্চাশের অধিক। কিন্তু এই ইংলণ্ডের ইতিহাসে দেখিতে পাওয়া যায় যে অতি সংকটাপন্ন অবস্থায় একজন তরুণ যুবক রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হইয়াছিল। বর্তমান যুগে তুর্কী, ইটালী, চীন প্রভৃতি বহু নবজাগ্রত জাতির মধ্যে যুবকদেরই হস্তে সমাজের ও রাষ্ট্রের কত গুরুভার ন্যস্ত হইয়াছে।

 ধ্বংসের অথবা সৃষ্টির যেখানে প্রয়োজন, সেখানে ইচ্ছায় হউক, অনিচ্ছায় হউক, যুবকদের উপর নির্ভর করিতে হইবে, তাহাদিগকে বিশ্বাস করিতে হইবে, তাহাদের হাতে ক্ষমতা ও দায়িত্ব তুলিয়া দিতে হইবে। যেখানে সংরক্ষণেরই বেশি প্রয়োজন—যেখানে নানা কৌশলপূর্ণ সংরক্ষণ-নীতির উদ্ভাবনই প্রধান কাজ—সে ক্ষেত্রে আপনি প্রৌঢ়াবস্ত্রাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে অথবা গলিতদন্ত পলিত-কেশ বৃদ্ধকে সমাজের ও রাষ্ট্রের পুরোভাগে বসাইতে পারেন। আমাদের দেশ, আমাদের জাতি—ধ্বংস ও সৃষ্টির লীলার মধ্য দিয়া চলিয়াছে। আজ তাই তাহাদেরই ডাক পড়িয়াছে যাহারা সবুজ, যাহারা নবীন, যাহারা কাঁচা, যাহারা আপাতদষ্টিতে লক্ষীছাড়া।

 আমি জানি আমাদের সমাজে এখনো অনেক লোক আছেন যাঁহাদের মতে youth is a crime, তাঁহাদের মতে বয়সে তরুণ হওয়ার মতো ত্রুটি বা অপরাধ আর কিছুই হইতে পারে না। কিন্তু সে মনোভাবের পরিবর্তন হওয়া দরকার।

৯৩