পাতা:তরুণের স্বপ্ন - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/১২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৪
তরুণের স্বপ্ন

তাঁহাদের মধ্যে শিক্ষা-দীক্ষা, বিদ্যা-বুদ্ধি অথবা আভিজাত্যের গর্ব্ব নাই। আশা করি, বিনয়রূপ পরম সম্পদ তাঁহারা কোনও দিন হারাইবেন না!

দেশবন্ধুর শেষ পত্র আমি পাই পাটনা হইতে, সে পত্র আজ সুদূর ব্রহ্মদেশে আমার নিকট তাঁহার অমূল্য শেষ স্মৃতি-চিহ্ন। তাঁহার সহকর্ম্মী ও অনুচরদের গ্রেপ্তারের পর তিনি যেরূপ যন্ত্রণায় কালক্ষেপ করিতেছিলেন তাহার সুস্পষ্ট নিদর্শন সেই পত্রে ছিল। সে যন্ত্রণা যে কত তীব্র তা শুধু তিনিই বুঝিতে পারেন যিনি তাঁহার প্রাণের পরিচয় পাইয়াছেন।

১৯২১ ও ১৯২২ খ্রীষ্টাব্দে দেশবন্ধুর সহিত ৮ মাস কাল কারাগারে কাটাইবার সৌভাগ্য আমার হইয়াছিল। তন্মধ্যে দুই মাস কাল আমরা পাশাপাশি “সেলে” (ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠে) প্রেসিডেন্সী জেলে ছিলাম এবং বাকী ৬ মাস কাল আরও কয়েকজন বন্ধুর সহিত আলিপুর সেণ্ট্রাল জেলের একটি বড় ঘরে ছিলাম। এই সময়ে তাঁহার সেবার ভার কতকটা আমার উপর ছিল। আলিপুর জেলে শেষ কয়েক মাস তাঁহার একবেলার রান্নাও আমাদিগকে করিতে হইত। গভর্ণমেণ্টের কৃপায় আমি যে ৮ মাস কাল তাঁহার সেবা করিবার অধিকার ও সুযোগ পাইয়াছিলাম—ইহা আমার পক্ষে চরম গৌরবের বিষয়। ১৯২১ খ্রীঃ অব্দে ডিসেম্বর মাসে গ্রেপ্তার হওয়ার পূর্ব্বে আমি মাত্র ৩।৪ মাস কাল তাঁহার অধীনে কাজ করিয়াছিলাম। সুতরাং সেই সঙ্কীর্ণ সময়ের মধ্যে তাঁহাকে ভাল রকম বুঝিবার সুবিধা আমার হয় নাই। তারপর যখন ৮ মাস কাল একত্র বাস করিবার সুযোগ ও সৌভাগ্য ঘটিল তখন খাঁটি মানুষকে আমি চিনিতে পারিলাম। ইংরাজীতে একটা কথা আছে 'familiarity breeds contempt'—বেশী ঘনিষ্ঠতা হইলে না কি অশ্রদ্ধা জন্মায়, কিন্তু দেশবন্ধু সম্বন্ধে বলিতে পারি যে, ঘনিষ্ঠতার ফলে তাঁহার প্রতি আমার শ্রদ্ধা