পাতা:তরুণের স্বপ্ন - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/১৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পত্র
১২৩

শঙ্করের মায়াবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ স্বরূপ অচিন্ত্য ভেদাভেদবাদের কেন সৃষ্টি হইল? এই সব প্রশ্ন তুলিলেই বুঝা যাইবে যে, বাঙ্গালীর শিক্ষাদীক্ষার একটা স্বাতন্ত্র্য, একটা বৈশিষ্ট্য আছে। বাঙ্গলার শিক্ষার মধ্যে প্রধানতঃ তিনটা ধারা দেখিতে পাওয়া যায়:—(১) তন্ত্র, (২) বৈষ্ণব ধর্ম্ম, (৩) নব্যন্যায় ও রঘুনন্দনের স্মৃতি। ন্যায় ও স্মৃতির দিক দিয়া আর্য্যাবর্ত্তের সহিত বাঙ্গলার নাড়ীর সংযোগ আছে। বৈষ্ণবধর্ম্মের দিক দিয়া দাক্ষিণাত্যের সহিত বাঙ্গলার প্রাণের সংযোগ আছে। তন্ত্রের দিক দিয়া তিব্বতীয়, ব্রহ্মদেশীয় ও হিমালয় প্রান্তবাসী জাতিদের সহিত বাঙ্গলার সম্বন্ধ আছে।

ন্যায়শাস্ত্রের অনুশীলন বাঙ্গালীকে তার্কিক ও নৈয়ায়িক-প্রকৃতি করিয়াছে। এই প্রকৃতি দেশবন্ধুর চরিত্রের মধ্যে প্রতিফলিত হইয়া তাঁহাকে বড় ব্যারিষ্টার করিয়া তুলিয়াছিল। কি নৈয়ায়িক, কি ব্যবহারজীবী উভয়েরই চুল-চেরা তর্ক লইয়া কারবার। দেশবন্ধু প্রাচীন ন্যায়শাস্ত্র অধ্যয়ন করিয়াছিলেন কি না আমি জানি না—তবে পাশ্চাত্য ন্যায়শাস্ত্রের সহিত তাঁহার পরিচয় ছিল। খুব বড় নৈয়ায়িক পণ্ডিতের ন্যায় তিনি চুল-চেরা তর্ক করিতে পারিতেন এবং অবিরাম বাক্যস্রোতের দ্বারা শত্রুপক্ষকে বিধ্বস্ত করিবার ক্ষমতা তাঁহার ছিল। দুই তিন শত বৎসর পূর্ব্বে নবদ্বীপে জন্মগ্রহণ করিলে তিনি যে বড় নৈয়ায়িক হইতেন সে বিষয়ে আমার কোন সন্দেহ নাই।

বাঙ্গলার বৈষ্ণব-ধর্ম্ম ও দ্বৈতাদ্বৈতবাদ দেশবন্ধুকে নাস্তিকতা হইতে টানিয়া লইয়া নীরস বেদান্তের ভিতর দিয়া প্রেমমার্গে লইয়া গিয়াছিল, দার্শনিক মতহিসাবে তিনি অচিন্ত্যভেদাভেদবাদকে সবচেয়ে খাঁটি মত বলিয়া মনে করিতেন। তিনি অনেক বিষয়ে সন্ন্যাসীর মত হইলেও