পাতা:তরুণের স্বপ্ন - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/১৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩২
তরুণের স্বপ্ন

তাঁহার প্রবল শত্রু তাঁহার সম্মুখীন হইলে যেন ভগ্নপৃষ্ঠ হইয়া পড়িতেন। দেশবাসীর মনেও ক্রমশঃ এই ধারণা জন্মিতেছিল—যাত্র দাশ মহাশয় তত্র জয়।

তিনি কত রকম লোককে দিয়া কত দিকে কাজ করাইবার চেষ্টা করিয়াছিলেন তাহা বোধ হয় দেশবাসী অবগত নহেন। তাঁহার অনুপ্রেরণার ফল যে দিন ফলিবে দেশবাসী সে দিন তাহা জানিবেন। আদর্শের নিত্য অনুপ্রেরণায় তিনি অনুপ্রাণিত হইতেন এবং তাহার সংস্পর্শে যাঁহারা আসিতেন তাঁহারাও উদ্দীপিত হইতেন। জীবনে মরণে শয়নে স্বপনে তাঁহার ছিল এক ধ্যান, এক চিন্তা—স্বদেশ-সেবা এবং সেই স্বদেশ-সেবা তাঁহার ধর্ম্ম-জীবনের সোপান স্বরূপ।

দেশবন্ধুর জীবনের কথা উল্লেখ করিলে যদি আর এক জনের কথা না বলা হয় তবে কিছুই বলা হইল না। যে দেবী লোক চক্ষুর অন্তরালে মূর্ত্তিমতী সেবা ও শান্তির মত ছায়ার ন্যায় সর্ব্বদা দেশবন্ধুর পার্শ্বে থাকিতেন, তাঁহাকে বাদ দিলে দেশবন্ধুর জীবনে কতটুকু বাকী থাকে কে বলিতে পারে? ভোগের অতুচ্চ শিখরে যিনি হিন্দু রমণীর আদর্শ লজ্জা, নম্রতা ও সেবা কোনও দিন বিস্মৃত হন নাই—বিপদের ঘনান্ধকারে যিনি হিন্দু পতিব্রতার একমাত্র সম্বল—চিত্তস্থৈর্য্য ও ভগদ্বিশ্বাস হারান নাই—মেই দেবীর কথা লিখিতে গেলে আমি ভাষা খুঁজিয়া পাই না। দেশবন্ধু ছিলেন তরুণদের রাজা। তাহার পতিব্রতা সাধ্বীপত্নী ছিলেন—তরুণদের মাতা। দেশবন্ধুর দেহত্যাগের পর তিনি আজ শুধু চিররঞ্জনের মাতা নন্‌, শুধু তরুণদের মাতা নন্‌—তিনি আজ নিখিল বঙ্গের মাতা। বাঙ্গালীর হৃদয়ের সর্ব্বশ্রেষ্ঠ অর্ঘ আজ তাহার চরণে সমর্পিত।