পাতা:তরুণের স্বপ্ন - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৮
তরুণের স্বপ্ন

বাঙ্গালীকে জাতিহিসাবে সবল ও বীর্য্যবান হতে হবে। কয়েকজন ভুবনবিজয়ী পালোয়ান সৃষ্টি করলেই এ উদ্দেশ্য সাধিত হবে না। কারণ এরূপ পালোয়ানের শক্তি ও শৌর্য্যের গুণে জাতির গৌরব বৃদ্ধি হলেও সাধারণ বাঙ্গালীর শক্তি বৃদ্ধি হবে না। জাতি-বিশেষের বিচার করতে হ’লে শুধু তার শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধিদের দেখলে চলবে না—সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ লোকেদের দিকেও তাকাতে হবে।

 বাঙ্গালীর যে আজকাল ভুপর্য্যটনের স্পৃহা জেগে উঠেছে, এটা সবচেয়ে আনন্দদায়ক। বাঙ্গালী যে আজ ঘরের কোণ ত্যাগ করে পায়ে হেঁটে, সাঁতার দিয়ে, সাইকেলে চড়ে দেশ বিদেশে ভ্রমণে বাহির হবে, বিশ বৎসর পূর্ব্বে কে এ কথা বিশ্বাস করত? অজানা দেশ দেখবার, অজানা পথে হাঁটবার, অজানা লোকের সঙ্গে পরিচিত হবার, এই যে ব্যাকুলতা—এর থেকেই জাতিগঠন ও সাম্রাজ্য সৃষ্টি হয়ে থাকে। যে সব জাতি স্বীয় গণ্ডীর বাইরে যেতে চায় না বা যেতে অপারগ—তাদের পতন অবশ্যম্ভাবী। অপর দিকে যে সব জাতি বাধা-বিঘ্ন অতিক্রম করেও প্রাণের মায়া ত্যাগ করে দেশ-বিদেশে ভ্রমণ করে, তাদের দিন দিন দৈহিক ও মানসিক উন্নতি এবং সঙ্গে সঙ্গে সাম্রাজ্য বিস্তার হয়ে থাকে। কবি দ্বিজেন্দ্রলাল যখন গেয়েছিলেন—“আমার এই দেশেতে জন্ম, যেন এই দেশেতে মরি”—তখন তিনি আমাদের সামনে ভ্রান্ত আদর্শ উপস্থিত করেছিলেন। আমাদের এখন বলবার সময় এসেছে—

“আমি যাব না, যাব না, যাব না ঘরে
বাহির করেছে পাগল মোরে।”

ঘরের কোণ ছেড়ে আমাদের এখন বিশ্বের মধ্যে বেরিয়ে পড়তে হবে—নিজেদের দেশটাকে প্রত্যক্ষভাবে ভাল কর দেখতে হবে; তারপর