পাতা:তারাচরিত.pdf/৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তারাচরিত।
২১

মালতীরে বলিতে লাগিলেন সজনি জন্মের মতন বিদায় দাও, এই দেখা শেষ দেখা আর দেখা দুর্ল্লভ হইবে, সখি এস একবার গাঢ় আলিঙ্গন করি, তোমার সুধারূপ প্রণয় পীযূষ পান করিয়া এত দিন জীবন রূপ তরু সিঞ্চাইয় রাখিয়া ছিলাম। অদ্য সেই সলিল ছাড়িয়া আমি যাইতেছি। সজনি একবার আমাকে প্রণয় সম্বোধনে আহ্বান কর, সেই সুধা পান করিয়া আমি সমরে জীবনাহুতি দিতে যাইতেছি। এই বলিয়া তারা নিস্তব্ধ হইলে, মালতী বলিলেন কেন আজ এরূপ নিষ্ঠুর বাকাবাণ হানিয়া আমার হৃদয় বিদ্ধ করিতেছ। তোমার এই হৃদয় ভেদী কথা সকল প্রয়োগ করা উচিত হয় না। তখন তারা যুদ্ধের বন্দোবস্ত আনুপূর্ব্বিক সকল বলিলেন। শুনিয়া মালতী ছিন্নমূল তরুর ন্যায় ভূতলশায়িনী হইয়া মূর্চ্ছিত প্রায় হইলেন। দেখিয়া তার বলিলেন সখি এ অমন করিবার সময় নয়, এখন আমাকে সান্তনা করিতে চেষ্টা কর। তুমি অমন করিলে আমি ভগ্নোৎসাহ হইব। সজনি উঠ উঠ আমাকে আলিঙ্গন কর। তারা এই বলিলা অনেক প্রবোধ দিলে পর, মালতী নয়ন উন্মীলন করিয়া বলিলেন, আর উঠিবার শক্তি নাই, কোন শক্তিতে উঠিব বল। এই বলিয়া মালতী উচ্চৈঃস্বরে রোদন করিতে লাগিলেন। তখন তারা আর রোদন সম্বরণ করিতে না পারিয়া মালতীর গলদেশে বাহুলতা বেষ্টন করিয়া রোদন করিতে লাগিলেন। পরে তারা উঠিয়া মালতীকে আলিঙ্গন করিয়া রণোন্মখে ধাবিত হইলেন।