পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/১০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৪
তিতাস একটি নদীর নাম

ভাবে বর্ণনা করিল। ইহাই জেলেদের রোমান্স। নদীর রহস্য তারা শুনিয়াও আনন্দ পায়, শুনাইয়াও আনন্দ পায়। আর স্রোতা যদি ইতিপূর্বে না শুনিয়া থাকে, অধিকন্তু শ্রোতা যদি বক্তার কাছে নূতন মানুষ কেউ হয়, তাহা হইলে বক্তার বলার উদ্দীপনা বাঁধ মানে না। পাটাতনের তলার মানুষটির সম্বন্ধে তিলক খুবই সজাগ। নয়া গাঙের এই রহস্যময় কাহিনী সে নিশ্চয়ই কান পাতিয়া শুনিতেছে।

 পরিশেষে তিলক বলিল, এত কাণ্ড করিয়াও শেষে নয়া গাঙ কিনা মূল মেঘনাতেই গিয়া পড়িয়াছে!

 মোহনাটি সত্যই ভয়ঙ্কর। এপার হইতে ওপারের কূলকিনারা চোখে ঠাহর করা যায় না। হু হু করিয়া চলিতে চলিতে স্রোত এক একটা আবর্তের সৃষ্টি করিয়াছে। দুই ধারের স্রোত মুখোমুখি হইয়া যে ঝাপটা খাইতেছে, তাহাতে প্রচণ্ড শব্দ করিয়া জল অনেক উপরে উঠিয়া ভাঙ্গিয়া পড়িতেছে। একটানা একটা সোঁ সোঁ শব্দ দূর হইতেই কানে ভাসিয়া আসিতেছে।

 এই ভয়ঙ্করের একপাশে খাড়িটি বড় সুন্দর। বড় নিরাপদ স্থান। খালের মত একটা সরু মুখ দিয়া ঢুকিয়া অল্প একটু গেলেই এক প্রশস্ত জলাশয়ের বুক পাওয়া যায়। শান্ত শিষ্ট জলাশয়। প্রচণ্ড বাতাসেও বড় ঢেউ উঠে না।


 তারা ভেতরে ঢুকিয়া দেখে, সেখানে অনেক নৌকার সমারোহ। তার বেশির ভাগ ধান-বেপারী, কাঁঠাল-বেপারী