পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/১৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তিতাস একটি নদীর নাম
১৩১

জোরে, কেউ বুদ্ধির জোরে। তবে যাদের বিচারবুদ্ধি বা উপস্থিত বুদ্ধি কিংবা কথার প্যাঁচ খাটানোর প্রতিভা আছে, সকল বৈঠকেই তাদের প্রাধান্য। এই শ্রেণীর কেউ যদি ভ্রাতৃ ও অর্থবলে বলীয়ান হয়, তার কথার উপর কথা বলার সাহস কম লোকেরই হইয়া থাকে। এমনই যে ব্যক্তিটি মাঝখানে বসিয়া আছে, তার চোখমুখের চেহারা ও বসিবার ভঙ্গি অনন্তর মা’র দৃষ্টি প্রথমেই আকর্ষণ করিল।

 সুবলার বউ বুঝাইয়া দিল, ‘এইজনেরেই কয় বড়-মাতব্বর।’ কানের কাছে মুখ নিয়া বলিল, ‘নাম রামপস্‌সাদ।’

 শিবের মতন চোখ, মণিগোঁসাইর মতন দাড়ি, এ-জনেরে দেইখ্যা, আমার জেঠার কথা মনে পড়ে ভইন। কোন্ দিক দিয়া বাড়ি।’

 ‘এ গাওয়ে থাকে না। কালোর বাপের সাথে বিবাদ কইরা দশবচ্ছর আগে ঘরদুয়ার লইয়া যাত্রাবাড়ি গেছে। ঘাটে গেলে তিতাসের বাঁকে যে মঠ দেখা যায় তারই পরে কুড়ুলিয়া খাল। খালের ঐ পারের গাওয়ের নাম যাত্রাবাড়ি। সেই গাওয়ে আর মালো নাই, খালি কৈবর্তরা থাকে।’

 তাঁর পরেই যিনি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন, তাঁর চোখমুখ দুর্বাসার মত ক্রোধারক্ত। বয়স হইলেও যুবকের মত সটান।

 —বড় মাতব্বরের পরেই এজনের কথা গ্রাহ্য হয়। কায়েত পাড়ায় যাত্রার দল হয়, তাতে তিনি মুনি-ঋষির পাঠ করেন। কৌপীন পরিয়া নামাবলি গায়ে দিয়া খড়ম পায়ে তিনি যখন আসরে ঢোকেন, ভয়ে তখন কারো মুখ দিয়া কথা ফোটে