পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/১৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তিতাস একটি নদীর নাম
১৭৭

 অনন্ত ঠিক তাদেরই মত করিয়া বসিল। তাদেরই মত করিয়া হাত বাড়াইয়া আগুনের উষ্ণতা ছিনাইয়া আনিয়া গালে মুখে মাখাইতে লাগিল।

 সুবলার-বৌ পূজার আয়োজন দেখিতে আসিয়াছিল। ভাঁড়ার ঘরের বারান্দায় উঠিয়া ডাকিল, ‘অ দিদি, অ অনন্তর মা, দেইখ্যা যাও তোমার অনন্তর কাণ্ড। বুড়ার দলে মিশ্যা তোমার পুলা বুড়া হইয়া গেছে।’

 পূজার নৈবেদ্যগুলি সাজাইবার পর এই এখন তার ছেলের কথা মনে পড়িয়াছিল। মনে করিয়াছিল হাতে যখন কাজ নাই তখন ছেলেটাকে একবার তালাস করিয়া আসি। এমন সময় সুবলার বৌর ডাক। দেখিয়া তারও হাসি পাইল। বড় করুণাও জাগিল ছেলের উপর। ছেলের কেবল আধখানা পিঠ তখন দেখা যাইতেছে। সাতপরতা মেঘে যেমন চাঁদ ঢাকা পড়ে, অনন্তর দেহখানাও বুড়াদের জবর-জঙ্গিমার আড়ালে তেমনিভাবে ঢাকা পড়িয়া গিয়াছে। মা কতক্ষণ দাঁড়াইয়া দেখিল। একসময়ে দেখা গেল, একখানা ছোট হাত দুইপাশের বুড়া দুইজনার কাঁথা-কাপড় সরাইবার দুঃসাধ্য চেষ্টা করিতেছে। কারণ, এই সময় ঠাণ্ডা বাতাস অনুভব করিয়া বুড়ারা আগুনের ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করিতেছিল। যাই হোক, চকিতের মধ্যেই মেঘের রাশি অপসারিত করিয়া ছোট মুখখানা জাগিয়া উঠিল। মা এদিকে আছে তারই জন্ত বোধ হয় চাঁদ এদিকে ফিরিয়া দেখা দিল।

 সে-চাঁদ অগৌণে আবার মেঘে-ঢাকা পড়িল। ভাল