পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/২১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তিতাস একটি নদীর নাম
২০৩

বলিল, ‘তুমি অখন বাইর হইয়া যাও। আমার মাইয়ারে আমি সমঝামু।’

 মা সান্ত্বনার সুরে মেয়েকে বলিল, ‘পোড়াকপালি’ তুই কি দশজনের বৈঠকে তোর বাপেরে ভক্তি দেওয়াইতে চাস। তার মান ইজ্জত আছে না।’

 ‘আছে ত আছে। তাতে আমার কি এমন সাতবংশ উদ্ধার পাইছে? ভাবছিলাম আমারই দুঃখের দুঃখী অনন্তর মার মত সাথী পাইয়া, অনন্তর মত ছাইলা কোলে পাইয়া সব জ্বালাযন্ত্রণা জুড়ামু। তোমরা আমারে তার কাছে যাইতে দিবা না। দিবা না যখন, আমি মানুষ ধরুম। দেখি তোমরা কদিন আমারে ঘরে বাইন্ধা রাখতে পার।’

 ‘আ-লো পোড়াকপালি, অখনই যা। অনন্তর মার কাছে তুই অখনই যা। তবু পুরুষ মানুষ থাইক্যা মনটারে ফিরাইয়া রাখ।’

 ‘মা, তুমি ত জান, আজ দুই দিন অনন্তর মার পেটে দানাপানি নাই।’

 ‘লইয়া যা। দুই টুরি চাউল লইয়া যা। একটা ঝাগুর মাছ আছে, লইয়া যা। আর যা যা তোর মনে লয়, লইয়া যা। আ-লো, অখনই যা।’

 ‘মা! অনন্তর মার কাপড়খানা ছিড়া রোঁয়া রোঁয়া হইয়া গেছে। আমার ত তিনখান কাপড়। একখান দেই?’

 ‘তোর ঠাকুরের কাছে জিগাইয়া পরে কমু, তুই অখন যা। না না, শুন্, তোর ঠাকুরেরে জানাইবার কাম নাই। অনন্তর মারে একটা কাপড় তুই দিয়া দে।’