বনমালী মনে করিয়াছিল তারা তীরে নাও ঠেকাইয়া বসিয়া থাকিবে। কিন্তু তীর কোথায়। কাছেই তীর; তবু চোখে দেখা যায় না। ধনঞ্জয় ছইয়ের পেছনের মুখ ধাপর দিয়া ঢাকিতে ঢাকিতে বলিল, ‘বনমালী ভাই, গাঙ দীঘালে নাও চালাইয়া কোনো লাভ নাই। ইখানেই পাড়া দে।’
ভারী মোটা একটা বাঁশ জলে নামাইয়া নদীর মাঝখানেই দুই জনে পাড় দিতে দিতে পুঁতিয়া ফেলিল। তার সঙ্গে শক্ত দড়ি দিয়া নৌকাখানা বাঁধিয়া ধনঞ্জয় বলিল, ‘থাউক, নাও অখন বাতাসের সাথে সাথে ঘুরুক। কই অ মিয়ার পুত, ছইয়ের তলে গিয়া বও।’
কাদির মাথা ঢুকাইতে ঢুকাইতে থামিয়া গেল দেখিয়া বনমালী বলিল, ‘ছইয়ের তলে কিছু নাই, ভাত ব্যানুন সব খাওয়া হইয়া গেছে।’
পাঁচজনেরই ভিজা গা। সঙ্গে একাধিক কাপড় নাই যে বদলায়। ছোট ছইখানার ভিতরে তারা গা-ঠেকাঠেকি করিয়া বসিয়া রহিল। কাদিরের ভিজা চুল এলোমেলো হইয়া গিয়াছে। তার শাদা দাড়ি হইতে বিন্দু বিন্দু জল ঝরিয়া পড়িতেছে বনমালীর কাঁধের উপর। কাদির এক সময় টের পাইয়া হাতের তালুতে বনমালীর কাঁধের জলবিন্দুগুলি মুছিয়া দিল। বনমালী ফিরিয়া চাহিল কাদিরের মুখের দিকে। বড় ভাল লাগিল তাকে দেখিতে। লোকটার চেহারায় যেন একটা সাদৃশ্য আছে যাত্রাবাড়ির রামপ্রসাদের সঙ্গে। তারও মুখময় এমনি শাদ সোণালি দাড়ি। এমনি শান্ত অথচ কর্মময়