পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/২৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তিতাস একটি নদীর নাম
২২৫

মুখভাব। রামায়ণ মহাভারতে পড়া বাল্মীকি ও অন্যান্য মুনিঋষিদের যেন রামপ্রসাদ একজন উত্তরাধিকারী। আর এই কাদির মিয়া? হাঁ, তার মনে পড়িতেছে। সেবার গোকনঘাটের বাজারে মহরমের লাঠিখেলা হয়। বনমালী দেখিতে গিয়াছিল। ফিরিবার সময় তাদেরই গায়ের একজন মুসলমানের সঙ্গে পথে তার দেখা হয়। তারই মুখে কারবালার মর্মবিদারক কাহিনী শুনিতে শুনিতে বনমালী প্রায় কাঁদিয়াই ফেলিয়ছিল। এর সঙ্গে আরও শুনিল তাদের প্রিয় পয়গম্বরের কাহিনী। সেজন বীরত্বে ছিল বিশাল, কিন্তু তবু তার আপন জনকে বড় ভালবাসিত। কাদির যেন সেই বিরাটেরই একটুখানি আলোর রেখা লইয়া বনমালীর কাঁধে দাড়ি ঠেকাইয়া চুপচাপ বসিয়া আছে। বনমালীর বড় ভাল লাগিতেছে। বাস্তবিক, যাত্রাবাড়ির রামপ্রসাদ, বিরামপুর গাঁয়ের এই কাদির মিয়া—এরা এমনি মানুষ, যার সামনে হোঁচট খাইলে হাত ধরিয়া তুলিয়া অনেক কাঁটাঘেরা পথ পার করাইয়া দিবে; আবার দাড়ির নিচে প্রশান্ত বুকটায় মুখ গুঁজিয়া, দুই হাতে কোমর জড়াইয়া ধরিয়া ফুঁপাইয়া কাঁদিলেও ধমক দিবে না, কেবল অসহায়ের মত পিঠে হাত বুলাইবে। বনমালীর চোখ সজল হইয়া উঠে। তার বাপও ছিল এমনি একজন। কিন্তু সে আজ নাই। একদিন রাতের মাছধরা শেষে ভিজা জাল কাঁধে করিয়া বাড়ী ফিরিতেছিল। পথের মাঝে তুফানে গাছ-চাপা পড়িয়া মারা গিয়াছে।

 ছইয়ের বাহিরে বাঁশের মাচানগুলিতে বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটা পড়িয়া ভাঙ্গিয়া চৌচির—শতচির হইয়া পড়িতেছে। নৌকার