পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/২৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬৬
তিতাস একটি নদীর নাম

ঘরে গিয়া ঢুকিল কতকগুলি পানসুপারী নিয়া। লবচন্দ্রের বউ তাকে ভাত খাওয়াইয়া বিছানা করিয়া বলিল, শুইয়া থাক; কিন্তু শুইল না, বাহির হইয়া ভূতের মতন আঁধারে মিলাইয়া গেল। দিনের বেলা লবচন্দ্রের বউ তার স্বামীকে দিয়া কি খোঁজাটাই না খোঁজাইয়াছে, কিন্তু কোথায় থাকে কেউ বলিতে পারে না! কেউ নাকি বলে জঙ্গলের মধ্যে থাকে, কেউ বলে শিয়ালের গর্তে থাকে— কেউ বলে, যাত্রাবাড়ির শ্মশানে যে মঠ আছে, তার ভিতর থাকে! ছেলেটা দেওয়ানা হইয়া না গেলেই হয় দিদি।

 খুব যে দরদ লবচন্দ্রের বউ-এর। স্বামীকে দিয়া খোঁজাইয়াছে। বলি কয়দিনের কুটুম? এতদিন দেখাশুনা করিয়াছে কে? মা যখন মরিল, লবচন্দ্রর বউ তখন কোথায় ছিল? আর মরিতে আসিলেই যদি, এদিকের পথে ত কাঁটা দিয়া রাখে নাই কেউ। ভাত ভিক্ষা করিয়া খাইতে আসিয়া লবচন্দ্রর ঘরে কেন—এমন ভিক্ষা ত আমিও দিতে পারিতাম। কথাগুলি সুবলার বউ মনে মনে ভাবিল, কিন্তু প্রকাশ করিয়া বলিল না।

 রাত্রিতে পেট পুরিয়া খাইয়া শুইতে গিয়াছে, এমন সময় বিন্দার মা আসিয়া বলিল, ‘অ সুবলার বউ, দেইখ্যা যা রঙ্গ।’

 ধড়ফড় করিয়া উঠিয়া গিয়া দেখে অনন্ত আঁস্তাকুড়ের পাশে বসিয়া বসিয়া আঁচাইতেছে, আর লবচন্দ্রর বউ হাতে একটা কেরাসিনের কুপি লইয়া দাঁড়াইয়া আছে! এতখানি সামনে গিয়া পড়া সুবলার বৌয়ের অভিপ্রেত ছিল না। সে