পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/২৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তিতাস একটি নদীর নাম
২৮৫

অনন্ত একবার নদীর তীর ধরিয়া হিমাইল রাজার দেশে যাইবে, আর সে-দেশ হইতে পায়ে হাঁটিয়া স্বর্গে যাইবে।

 অনন্তর সব শ্রদ্ধা প্রণতি হইয়া লুটাইয়া পড়ে, তুমি অত জান! তোমারে নমস্কার।


 নৌকাটা হঠাৎ কিসে ধাক্কা খাইয়া থামিয়া গেল। কোমরজলে দাঁড়ানো মোটা মোটা গাছেরা জলের উপর দিয়া অনেক ডাল মেলিয়াছে, অজস্র পাতা মেলিয়াছে। সেই ডালপাতার গহনারণ্য মাথায় করিয়া নৌকা ঘাটের মাটিতে ঠেকিয়াছে। উদয়তারার তন্দ্রা অসিয়াছিল। সচকিত হইল। বনমালী পাছার খুঁটি পুঁতিতেছে, নৌকার একটানা ঝাঁকুনিতে টের পাইল উদয়তারা। সুদিনে তার বিবাহ হইয়াছিল, সুদিনে সে এখান হইতে বিদায় হইয়াছে। তখন এসব জায়গা ছিল ডাঙ্গা। জল ছিল অনেক দূরে, গাঙের তলায়। তারপর উদায়তারার কত বর্ষা কাটিয়াছে জামাইবাড়িতে। এখানে কোন বর্ষার মুখ বিবাহের পর থেকে দেখে নাই। তবু পরিচিত গাছগুলি আঁধারেও তার মনে জ্বলজ্বল করিয়া উঠিল। তার তলার মাটি তখন শুক্‌না ঠন্‌ঠনে, সে মাটিতে বসিত চাঁদের হাট। ছেলেরা খেলিত গোল্লাছুট খেলা, আর মেয়েরা খেলিত পুতুলের ঘরকন্নার খেলা। কত ঠাণ্ডা ছিল এর তলার বাতাস। আর এখন এর তলায় ঠাণ্ডা জল থই থই করে। উদয়তারার বয়সী মেয়েরা চলিয়া গিয়াছে পরের দেশে পরের বাড়িতে, আর ছেলেরা এখন বড় হইয়া এ জলে স্নান করে।