পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তিতাস একটি নদীর নাম
১৯

কেতাবে, কোনো রাষ্ট্রবিপ্লবের ধারাবাহিক বিবরণীতে এ নদীর নাম কেউ খুঁজিয়া পাইবে না। কেননা, তার বুকে যুযুধান দুই দলের বুকের শোণিত মিশিয়া ইহাকে কলঙ্কিত করে নাই। কিন্তু তাই বলিয়া তার কি সত্যি কোনো ইতিহাস নাই?

 পুঁথির পাতা পড়িয়া গর্বে ফুলিবার উপাদান এর ইতিহাসে নাই সত্য, কিন্তু মায়ের স্নেহ, ভাইয়ের প্রেম, বৌ-ঝিয়েদের দরদের অনেক ইতিহাস এর তীরে তীরে আঁকা রহিয়াছে। সেই ইতিহাস হয়ত কেউ জানে, হয়ত কেউ জানে না। তবু সে ইতিহাস সত্য। এর পারে পারে খাঁটি রক্তমাংসের মানুষের মানবিকতা আর অমানুষিকতার অনেক চিত্র আঁকা হইয়াছে। হয়ত সেগুলি মুছিয়া গিয়াছে। হয়ত তিতাসই সেগুলি মুছিয়া নিয়াছে! কিন্তু মুছিয়া নিয়া সবই নিজের বুকের ভিতর লুকাইয়া রাখিয়াছে। হয়ত কোনোদিন কাহাকেও সেগুলি দেখাইবে না, জানাইবে না। কারো সেগুলি জানিবার প্রয়োজনও হইবে না। তবু সেগুলি আছে। যে-আখর কলার পাতায় বা কাগজের পিঠে লিখিয়া অভ্যাস করা যায় না, সে-আখরে সে-সব কথা লেখা হইয়া আছে। সেগুলি অঙ্গদের মতো অমর। কিন্তু সত্যের মতো গোপন হইয়াও বাতাসের মতো স্পর্শপ্রবণ। কে বলে তিতাসের তীরে ইতিহাস নাই!

 আর সত্য তিতাস-তীরের লোকেরা! তারা শীতের রাতে কতক কতক কাঁথার তলাতে ঘুমায়। কতক জলের উপর কাঠের নৌকায় ভাসে। মায়েরা, বোনেরা আর ভাই-বৌয়েরা