পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/৩৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তিতাস একটি নদীর নাম
৩৫১

মিস্ত্রিদের নিকট হাজির হইল। কিন্তু বড় মিস্ত্রী তাহাকে নিরাশ করিয়া জানাইল, হাতে বড় কাজ এখন সুবিধা হইবে না। আরও বলিয়া দিল, বাড়িতে গিয়া বল, দুধ জ্বাল দেওয়ার ঝামেলা পোহাইবার আজকাল আর সময় নাই। দুধ যেন বাড়ি হইতেই জ্বাল দিয়া চিড়াগুড়ের সঙ্গে পাঠাইয়া দেয়।

 রমুর মা দুধ জ্বাল দেওয়ার কড়াখানাকে ঝামা দিয়া দুই তিন বার মাজিয়া দুধ ফুটাইল এবং বড় একটা লোটার গলায় ফাঁস পরাইয়া রমুকে দিয়া পাঠাইল। মাথায় চিড়ার বোঝা, হাতে দড়ি-বাঁধা দুধের লোটা এই বেশে রমুকে দেখিয়া মিস্ত্রিরা হাসি সম্বরণ করিতে পারিল না।


 তারপর দেখিতে দেখিতে একদিন গোটা একটা নৌকা তৈয়ার হইয়া গেল। এখন শুধু বাকি রহিল, নৌকা কাত করিয়া তলার দিকটা পালিশ করা। সে কাজের ভার ছোট তিনজনার হাতে ছাড়িয়া দিয়া বড় মিস্ত্রী হুকা হাতে লইয়া বসিল এবং আস্তে আস্তে গান জুড়িয়া দিল—হস্তেতে লইয়া লাঠি, কান্ধেতে ফেলিয়া ছাতি, যায়ে বুরুজ দীঘল পরবাসে॥

 তারপর, পথশ্রমে বুরুজ ক্লান্ত হইল এবং—চৈত্রি না বৈশাখ মাসে, পিঙ্গল রৌদ্রির তাপে, লাগিল দারুণ জল-পিপাসা॥ তখন সে জলের জন্য এদিক ওদিক তাকাইতে লাগিল, কিন্তু কোথাও না নদী, না পুষ্করিণী। কিন্তু সহসা তার চোখে পড়িল—ঘরখানা লেপাপুছা, দুয়ারে চন্দনের ছিটা, এটা বুঝি ব্রাহ্মণের বাড়ি॥ বুরুজ নিজে ব্রাহ্মণ, কাজেই ব্রাহ্মণের বাড়ি