পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/৩৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তিতাস একটি নদীর নাম
৩৬৩

গানটা শুনিতে শুনিতে অনন্তবালার বয়সাধিক বড় খোপাটা ধরিয়া উদয়তারা আস্তে একটু মোচড়াইয়া দিল।


 অনন্ত আর অনন্তবালার চোখ অন্যদিকে। দুইটি প্রকাণ্ড মাটির গামলা বিচিত্র রঙে সাজাইয়া, দুইটি করিয়া হাত-বৈঠা হাতে করিয়া দুইটি লোক উহাদিগকে লইয়া ভাসিয়া পড়িয়াছে। উহাদের মুখে গান নাই, হাতে ছন্দ নাই। ফেশন করিয়া চুল দাড়ি ছাঁটাই করা, মাথায় জব্‌জবে তেল, পরিষ্কার ধুতির উপর গায়ে সাদা গেঞ্জি। মুখ টিপিয়া হাসিতেছে। আর জলে বৈঠা ডুবাইয়া এলোমেলো ভাবে টানিয়া আগাইতেছে।

 দেখিতে দেখিতে তারা অনন্তদের নৌকার একান্ত নিকটে আসিয়া পড়িয়াছে, আর একটু অসাবধান হইলে তাহাদের নাওয়ের বাতায় ঠেকিয়াই গামলা ভাঙ্গিবে। অনস্তবালা হাত বাড়াইয়া ছুঁইতে গেলে লোক দুইটা বৈঠা দেখাইল। বনমালী মেয়েদের দৃষ্টি আকৃষ্ট করিয়া বলিল, ‘সকলে দৌড়ায় নাও, তাইনে দৌড়ায় গামলা।’ অনন্তও বলিল, ‘জুড়ি কেনে ধরনা তোমরা, দেখতাম কে আগে যাইতে পারে।’ কিন্তু লোক দুটি এসব কথায় কান দিতেছে না। তাদের দিকে গ্রাম গ্রামান্তরের মেয়েদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হইতেছে, ইহাতেই তাহারা খুশি।

 ‘আমি কেনে একটা গামলা আন্‌লাম না। তা হইলে ত বৈঠা মাইরা বেশ দৌড়াইতাম।’ অনন্ত বলিল।

 ‘তুমি একলা পারতা নাকি, জিগাই? তুমি কি ঐ লোকটার মতন চালাক, না চতুর? বৈঠা হাতে লইয়া চাইয়া