পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/৩৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৬৮
তিতাস একটি নদীর নাম

 —যাও যাও আমি সব বুঝি। যেদিন হইতে মা গেছে, সেদিন হইতে সব গেছে। সেদিন হইতেই আমি ধরিয়া রাখিয়াছি পরবাসী বনবাসী আমি,—যে ডাকিয়া ঘরে লইবে তার ঘরই আমার ঘর, যে ঘৃণা করিয়া তাড়াইয়া দিবে, তার ঘরই আমার পর।

 ‘আরে বেইমান কাউয়া, এই সগল কথা তোরে কে শিখাইল, কোন্ বান্দিনীর ঝিয়ে শিখাইল?’

 উদয়তারা এবার ফাটিয়া পড়িল, ‘আ লো বান্দিনীর ঘরের চান্দিনী। মুখ সামলাইয়া কথা ক, বুক সামলাইয়া বাড়ি যা। বেশি কথা তুলিস না, ছালার মুখ খুলিস না।’

 সুবলার বউ আর সহ্য করিতে পারিল না। সাংঘাতিক একটা কিছু করিবার আয়োজনে সে আরও একটু আগাইয়া আসিয়া অনন্তর একখানা হাত ধরিল। অনন্তও জোর করিয়া মাসীর হাত ছাড়াইয়া উদয়তারার আশ্রয়ে নিজেকে নিরাপদ করিয়া লইয়া বলিল, ‘তুমি আমারে আদর জানাইও না মাসী।’

 মাসীর ধৈর্যের বাঁধ ভাঙ্গিয়া গেল। অপমানে তার মাথা লুটাইয়া পড়িতে চাহিল। উদয়তারা অবিশ্রাম গালি দিয়া চলিয়াছে। সবই অনন্তর জন্য। রাগে মাসীর আপাদমস্তক জ্বলিয়া গেল, বলিল, আদর আমি তোকে জানাইবই, তবে, মুখে নয়, হাতে।

 এই বলিয়া সে অনন্তর চুলের মুঠি ধরিয়া পিঠে দুম্‌দুম্ করিয়া কীল মারিতে লাগিল। অনন্ত ভয়ার্ত চোখে মাসীর ক্রুদ্ধ জ্বলন্ত চোখ দুটির দিকে চাহিয়াই চোখ নত করিল এবং তার