পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/৪২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪০৮
তিতাস একটি নদীর নাম

পাইয়া স্যাকরারা নানারকম গহনার নমুনা লইয়া, মনোহারী দোকানের লোকেরা তেল গামছা সাবান লইয়া ঘনঘন আসা যাওয়া করিতে লাগিল। রোজগারের সময় যা রোজগার করিত এইভাবে অপব্যয় হইয়া যাইত। দুর্দিনের জন্য এক পয়সাও সঞ্চয় থাকিত না। তখন তারা উপবাসে দিন কাটাইত। ছেলেমেয়েরা খাইতে না পাইয়া কাঁদিত। মেয়ের অনেক কাণ্ড করিবে বলিয়া ভয় দেখাইত। খাইতে দিতে পারিতেছে না বলিয়া লজ্জা পাইয়া পুরুষরা চুপ করিয়া থাকিত এবং নিরুপায়ের মত কেবল একদিকে চাহিয়া থাকিয়া জোরে জোরে হুকা টানিত।

 ক্রমে মনুষ্যত্বের পর্যায় হইতে তারা অনেক নিচে নামিয়া গেল। এত নিচে নামিয়া গেল যে, শত্রু নাকের ডগায় বসিয়া শত্রুতা করিয়া গেলেও মুখ তুলিয়া চাহিতে পারিত না। রোষকষায়িত চক্ষু ভূমির উপর নিবদ্ধ রাখিয়া এক দলা থুথু মাটিতে ফেলিয়া বলিত, ‘দূর হ কুত্তা, দূর হ কাওয়া।’ দিনে দিনে তারা আরও নিচে তলাইয়া গেল। শেষে এমন হইল যে, লোন কোম্পানির বাবুরা বন্দুকধারী পেয়াদা লইয়া আসিয়া টাকা আদায়ের জন্য মালোদের উপর যখন অকথ্য অত্যাচার চালাইয়া যথাসর্বস্ব লইয়া গেল, তখনও তারা কিছুই বলিতে পারিল না। গ্রামের কয়েকজন উৎসাহী ধনী ব্যক্তি মালোদের জন্য এখানে শহর হইতে ঋণদান কোম্পানির একটা শাখা আনিয়াছিল। সুদ খুব কম দেখিয়া মালোরা সকলেই হুজুগে মাতিয়া টাকা ধার করিয়াছিল। সে অনেক দিনের কথা। সেই থেকে