পড়ে। যা স্রোত! আগানো বড় কঠিন। তবু আগাইতে হইবে।
সকাল হইতে নৌকা বাহিয়া সুবল দুপুরে খাইয়া ঘুমাইয়া পড়িয়াছে। একটানা রাতের-জালে যাওয়ার এমনি অভ্যাস। জালে না গেলেও রাতে চোখে ঘুম আসে না। দুপুরে চোখে ঘুম আসে, ঘুমাইতে হয়। তিলক সে কাজ দুপুরের আগেই সারিয়াছে। হুকা হাতে শুইয়া ছিল। হাতের হুকা হাতেই ছিল। দেখিয়া মনে হইয়াছিল যেন চাহিয়াই আছে। চোখ খোলা। অথচ এরই মধ্যে ঘুমাইয়া নিয়াছে। এখন গলুইয়ে বসিয়া ঝপাঝপ দাঁড় ফেলিতে ফেলিতে জলের দিকে চাহিয়া বলিল, ‘এইবার যা মাছ পড়ব কিশোর! জলের রূপখান চাইয়া দেখ্।’
মেঘনার বিশালতা এখানে অনেক কমিয়া গিয়াছে। ভাঁটিতে থাকিতে এপার হইতে ওপার একটা রেখার মতো দেখা যাইত। এখন উজানে আসিয়া, এপারে থাকিয়া ওপারের খড়ের ঘরগুলি পর্যন্ত সুস্পষ্ট দেখা যাইতেছে।
বিকালে ঘুম ভাঙ্গিয়া উঠিয়া সুবল অবাক হইল।
তিলক, ইটা কোন্ গাঙ্?’
‘কোন্ গাঙ্ আবার। যে-গাঙ্ দিয়া আসা অইছে।’
‘ইখানে মেঘনা অত ছোট?’
‘যত উজানে যাইবা ততই ছোট।’
‘আরো কত উজানে যাইতে হইব? উজানি-নগরের খলা আর কতদূর? শুকদেবপুরের বাঁশিরাম মোড়লের বাড়ি আর কতদূর?’