পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তিতাস একটি নদীর নাম
৬৫

পিঠে লইছি—হাসাইছি, কাঁদাইছি, ডর দেখাইছি, ভেউরা বানাইয়া দিছি—তারে কি বিয়া করন যায়! বিয়া করন যায় তারে, যার লগে কোনোকালে দেখাসাক্ষাৎ নাই। দেখাসাক্ষাৎ খালি মুখাচণ্ডীর সময়—গীত-জোকারের লগে পিড়ির উপর শাড়ীর ঘোমটা তুইল্যা যখন চোখ মেইল্যা চায়।—সে হয় সত্যের স্তিরি। আর সগল তো ভইন।’

 সুবল ভাবে, কিশোরের মাথার ঠিক নাই। কিন্তু যদি সত্যই বাসন্তীর সহিত কিশোরের বিবাহ না হয়, তবে বাসন্তীর বিবাহ হইবে কাহার সহিত। সুবল ভাবে।

 মনের ভিতর একটা কিছু হইতেছে টের পাইয়া কিশোর কিছু লজ্জিত হয়। বলে, ‘আর পাড়া বেড়াইবার দরকার নাই সুব্‌লা, চল্ ফিরা যাই।’

 সে-অজানা ভাব অধিকক্ষণ থাকে না। থাকিলে কিশোর পাগল হইয়া যাইত।


 সেই স্নিগ্ধ নীলাভ ফাল্গুনী প্রভাত আসে। জাল লাগাইয়া মৃদু নৃত্যপরা তটিনীর বুকের গহনে গুঁজিয়া দেয় সেই জাল। তুলিয়াই দেখে মাছ। রূপার মত শাদা, ছোট ছোট প্রাণচঞ্চল অজস্র মাছ। এক একটা মাছে এক একটা প্রাণ। নৌকার ডরাতে জলের উপর ভাসিতে ভাসিতে কেমন খেলা করে। দুই মিনিটেই যাদের মৃত্যু, তারা মরণকে অবহেলা করিয়া এমন শান্তচিত্তে ভাসে কি করিয়া। কিন্তু বড় ভাল লাগে দেখিতে।