পাতা:তিনসঙ্গী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১২০
তিন সঙ্গী

 “সে হচ্ছে না, তোমার মুখে বাংলা যে খুব মজার শোনাবে— ঐ যেখানটাতে আছে, ‘হে বাংলাদেশের তরুণসম্প্রদায়, হে স্বাতন্ত্রাসঞ্চালনরথের সারথি, হে ছিন্নশৃঙ্খলপরিকীর্ণ পথের অগ্রণীবৃন্দ’ —যাই বলো ইংরেজিতে এ কি হবার জো আছে। তোমার মতো বিজ্ঞানবিশারদের মুখে শুনলে তরুণ বাংলা সাপের মতো ফণা তুলিয়ে নাচবে। এখনো সময় আছে আমি পড়িয়ে নিচ্ছি।”

 গুরুভার দীর্ঘ দেহকে সিঁড়ির উপর দিয়ে সশব্দে বহন করে সাহেবী পোশাকে ব্যাঙ্কের ম্যানেজার ব্রজেন্দ্র হালদার মচমচ শব্দে এসে উপস্থিত। বললে, “নাঃ এ অসহ্য, যখনই আসি নীলাকে দখল করে বসে আছ। কাজ নেই কর্ম নেই, নীলিকে তফাত করে রেখেছ আমাদের কাছ থেকে কাঁটাগাছের বেড়ার মতো।”

 রেবতী সংকুচিত হয়ে বললে, “আজ আমার একটু বিশেষ কাজ আছে তাই—”

 “কাজ তো আছে, সেই ভরসাতেই তো এসেছিলুম, আজ তুমি মেম্বরদের নেমন্তন্ন করেছ, ব্যস্ত থাকবে মনে করে আপিসে যাবার আগে আধ ঘণ্টাটাক সময় করে নিয়ে তাড়াতাড়ি এসেছি। এসেই শুনছি এখানেই উনি পড়েছেন কাজে বাঁধা। আশ্চর্য। কাজ না থাকলে এখানেই ওঁর ছুটি, আবার কাজ থাকলে এইখানেই ওঁর কাজ। এমন নাছোড়বান্দার সঙ্গে আমরা কেজো লোকেরা পাল্লা দিই কী করে। নীলি, is it fair!”

 নীলা বললে, “ডক্টর ভট্‌চাজের দোষ হচ্ছে, উনি আসল কথাটা জোর করে বলতে পারেন না। উনি কাজ আছে বলে এসেছেন এটা বাজে কথা; না এসে থাকতে পারেন না বলেই এসেছেন, এটাই একটা শোনবার মতো কথা এবং সত্যি কথা। আমার সমস্ত সময় উনি দখল করেছেন ওঁর জেদের জোরে। এই তো ওঁর পৌরুষ। তোমাদের সবাইকে ঐ বাঙালের কাছে হার মানতে হল।”

 “আচ্ছা ভালো, তা হলে আমাদেরও পৌরুষ চালাতে হবে।