পাতা:তিনসঙ্গী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৭৮
তিন সঙ্গী

জন্যে যদি বসিয়ে দিতে পারি, তা হলে যেখানে থাকুন তাঁর মন খুশি হবে।”

 চৌধুরী বললেন, “বাই জোভ, এতক্ষণে মেয়েমানুষের গলার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। শুনতে খারাপ লাগল না। একটা কথা জেনে রেখো, রেবতীকে যদি শেষ পর্যন্ত পুরোপুরি সাহায্য করতে চাও তা হলে লাখটাকারও লাইন পেরিয়ে যাবে।”

 “গেলেও আমার খুদকুঁড়ো কিছু বাকি থাকবে।”

 “কিন্তু পরলোকে যাঁকে খুশি করতে চাও তাঁর মেজাজ খারাপ হয়ে যাবে না তো? শুনেছি তাঁরা ইচ্ছা করলে ঘাড়ে চড়ে লাফালাফি করতে পারেন।”

 “আপনি খবরের কাগজ পড়েন তো। মানুষ মারা গেলেই তার গুণাবলী প্যারাগ্রাফে প্যারাগ্রাফে ছাপিয়ে পড়তে থাকে। সেই মৃত মানুষের বদান্যতার ’পরে ভরসা করলে তো দোষ নেই। টাকা যে মানুষ জমিয়েছে অনেক পাপ জমিয়েছে সে তার সঙ্গে, আমরা কী করতে আছি, যদি থলি ঝেড়ে স্বামীর পাপ হালকা করতে না পারি। যাক্‌গে টাকা, আমার টাকায় দরকার নেই।”

 অধ্যাপক উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলেন, “কী আর বলব তোমাকে। খনি থেকে সোনা ওঠে, সে খাঁটি সোনা, যদিও তাতে মিশোল থাকে অনেক কিছু। তুমি সেই ছদ্মবেশী সোনার ঢেলা। চিনেছি তোমাকে। এখন কী করতে হবে বলো।”

 “ঐ ছেলেটিকে রাজী করিয়ে দিন।”

 “চেষ্টা করব, কিন্তু কাজটা খুব সহজ নয়। আর-কেউ হলে তোমার দান লাফিয়ে নিত।”

 “কোথায় বাধছে বলুন।”

 “শিশুকাল থেকে একটি মেয়ে-গ্রহ ওর কুষ্টি দখল করে বসেছে। রাস্তা আগলে রয়েছে অটল অবুদ্ধি।”

 “বলেন কী। পুরুষমানুষ—”