পদ্য দৃষ্টিও আবশ্যক হইয়াছে। অতএব মাইকেল মধুহুদন দত্তের চেষ্টা রথোচিত সময়েই হইয়াছে, সন্দেহ নাই।
তিলোত্তমাসম্ভব কাব্যের অনেক স্থলই উন্নত হইয়াছে, গ্রন্থকারও উহাকে উন্নত করিবার নিমিত্ত সমুচিত যত্ন পাইয়াছেন। কিন্তু তাঁহার স্বত্ত্ব সম্পূর্ণরূপে সফল হয় নাই। আমাদিগের দেশের গ্রন্থকারেরা সচরাচর যে দোষে গাব্বষ্ট হইয়া থাকেন, তিনি সম্যকরূপে তাহার হস্ত পরিহার করিতে পারেন নাই। ফলতঃ তিনি যেরূপ নূতনবিধ উন্নত পথের সৃষ্টিক্রিয়ায় প্রবৃত্ত হইয়াছেন, তদহুরূপ বিষয়টি মনোনীত করিতে সমর্থ হন নাই। —‘সোম প্রকাশ,’ ২৩ শ্রাবণ ১২৬৭, পৃ. ৪৪৮-৪।
…কাব্যের প্রধান অঙ্গ অক্ষর বা মাত্রা, বৃত্তি ও যতি; আমরা তাহা অবশ্য প্রয়োজনীয় বোধ করি; এবং আমাদিগের আধুনিক কবি দত্তজও তাহার বিরুদ্ধমতাবলম্বী নহেন। পরন্তু, যতির অনুরোধে যে অন্যত্র বাক্যশেষে যতিভঙ্গ হয়, ইহা আমরা বোধ করি না। নিয়মিত স্থানে যতি রাখিয়া, পরে তথায় বা অন্যত্র পদের শেষ হইবার পূর্ব্বেই বাক্য শেষ করিলে যতিভঙ্গ হয় না, ইহাই আমাদিগের বক্তব্য। তাহার উদাহরণার্থে আমরা এক চরণান্তর্গত প্রশ্নোত্তর বিশিষ্ট কবিতায় উদ্দেশ করিতে পারি; তাহাতে আমাদিগের বাক্য সপ্রমাণ হইবে। তদ্ভিন্ন সামান্য কবিতায়ও তাহার অনেক দৃষ্টান্ত আছে। দেখুন, কুমারসম্ভবের ৪র্থ সর্গের ৫ম শ্লোক যথা—
উপমানমভূদ্বিলাসিনাং
করণং যত্তব কান্তিমত্তয়া।
তদিদং গতমীদৃশীং দশাং
ন বিদীর্য্যে—কঠিনাঃ খলু স্ত্রিয়ঃ!এ স্থলে চতুর্থ পাদের “ন বিদীর্ঘ্যে” পদের পরই অর্থের শেষ হইয়াছে। “কঠিনাঃ খলু স্ত্রিয়ঃ” বাক্যের সহিত পূর্ব্ব বাক্যের বৈয়াকরণীয় কোন আসক্তি নাই, অথচ ঐ স্থান ছন্দের যতি স্থান নহে। রঘুবংশে যথা,
—১ম সর্গ, ৫-১০ শ্লোক।মোঽহমাজন্ম শুদ্ধানামাফলোদয়কর্ম্মণাম্,
আসমুদ্রক্ষিতীশানামানাকরথবর্ত্মনাম্,
যথাবিধি হুতাগ্নীনাং যথাকামার্চ্চিতার্থিনাম্,
যথাপরাধদণ্ডানাং যথাকালপ্রবোধিনাম্,
ত্যাগায় সম্ভৃ তর্থানাং সত্যায় মিতভাষিণাম্,
যশসে বিজিগীষুণাং প্রজায়ৈ গৃহমেধিনাম্,
শৈশবেইভান্তবিদ্যানাং যৌবনে বিষয়ৈবিণাম্,
বার্দ্ধকে মুনিবৃত্তীনাং যোগেনান্তে তনুত্যজাম,
রঘূণামন্বয়ং বক্ষ্যে,এই বাক্যেও ইহার দৃষ্টান্ত দৃষ্ট হইবে। ইহাতে “বক্ষ্যে” পদেই অর্থের শেষ
পাতা:তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য - মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৯৬১).pdf/১৭
অবয়ব
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য : ভূমিকা
১৶৹