বসুমতী সতী তাঁর চরণকমলে,
জীবকুল লয়ে নমি নীরব হইলা।
আইলা রজনী ধনী ধবল-শিখরে
ধীরভাবে, ভীমা দেবী ভীম পাশে যথা
মন্দগতি। গেলা সতী কৌমুদীবসনা
শিলাতলে দেবরাজ বিরাজেন যথা।
ধরি পাদপদ্মযুগ করপদ্মযুগে,
কাঁদিয়া সাষ্টাঙ্গে দেবী প্রণাম করিলা
দেবনাথে। অশ্রু-বিন্দু, ইন্দ্রের চরণে,
শোভিল, শিশির যেন শতদল-দলে,
জাগান অরুণে যবে ঊষা সাজাইতে
একচক্ররথ, খুলি সুকমল-করে
পূর্ব্বাশার হৈম দ্বার! আইলেন এবে
নিদ্রাদেবী, সহ স্বপ্ন-দেবী সহচরী,
পুষ্পদাম সহ, আহা, সৌরভ যেমতি।
মৃদু মন্দ গন্ধবহ-বাহনে আরোহি,
আসি উত্তরিলা দোঁহে যথা বজ্রপাণি;
কিন্তু শোকাকুল হেরি দেবকুলনাথে,
নিঃশব্দে বিনতভাবে দূরে দাঁড়াইলা,
সুকিঙ্করীবৃন্দ যথা নরেন্দ্র সমীপে
দাঁড়ায়,—উজ্জ্বল স্বর্ণপুতলীর দল।
হেরি অসুরারি দেবে শোকের সাগরে
মগ্ন, মগ্ন বিশ্ব যেন প্রনয়সন্সিলে,—
কাঁদিতে কাঁদিতে নিশি নিদ্রা পানে চাহি,
সুমধুর স্বরে শ্যামা কহিতে লাগিলা;—
“হায় সখি, এ কি লীলা খেলিলা বিধাতা?
দেবকুলেশ্বর যিনি, ত্রিদিবের পতি,
এই শিলাময় দেশ—অগম, বিজন,
ভয়ঙ্কর—মরি! এ কি সাজে লো তাঁহারে?
হায় রে, যে কল্পতরু নন্দনকাননে,
পাতা:তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য - মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৯৬১).pdf/৩২
অবয়ব
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০
মধুসূদন-গ্রন্থাবলী
২০৫—২৩৪