মন্দাকিনী তটিনীর স্বর্ণতটে শোভে
প্রভাময়, কে ফেলে লো উপাড়ি তাহারে
মরুভূমে? কার বুক না ফাটে লো দেখি
এ মিহিরে ডুবিতে এ তিমির-সাগরে!”
কহিতে কহিতে দেবী শর্ব্বরী সুন্দরী
কাঁদিয়া তারাকুন্তলা ব্যাকুলা হইলা!
শোকের তরঙ্গ যবে উথলে হৃদয়ে,
ছিন্ন-তার বীণা সম নীরব রসনা;—
অরে রে দারুণ শোক, এই তোর রীতি!
শুনি যামিনীর বাণী, নিদ্রাদেবী তবে
উত্তর করিলা সতী অমৃতভাষিণী,
মধুপানে মাতি যেন মধুকরীশ্বরী
মধুর গুঞ্জরে, আহা, নিকুঞ্জ পূরিলা;—
“যা কহিলে সত্য, সখি, দেখি বুক ফাটে;
বিধির নির্ব্বন্ধ কিন্তু কে পারে খণ্ডীতে?
আইস এবে, তুমি, আমি, স্বপ্নদেবী সহ,
কিঞ্চিৎ কালের তরে হরি, যদি পারি,
এ বিষম শোকশেল, যতন করিয়া।
ডাক তুমি, হে স্বজনি, মলয় পরনে;
বল তারে স্বসৌরভ আগু আনিবারে;
কহ তব সুধাংশুরে শুধা বরষিতে।
যাই আমি, যদি পারি, মুদি, প্রিয়সখি,
ও সহস্র আঁখি, মন্ত্রবলে কি কৌশলে।
গড়ুক স্বপনদেবী মায়ায় পৌলোমী—
মৃগাক্ষী, পীবরস্তনী, সুবিম্ব-অধরা,
সুশোভিত কবরী মন্দারে, কৃশোদয়ী;
বেড়ুক দেবেন্দ্রে সৃজি মায়ার নন্দন;
মায়ার উর্ব্বশী জাসি, স্বর্ণবীণা করে,
গায়ুক মধুর গীত মধু পঞ্চস্বরে;
রম্ভা-উরু রম্ভা আসি নাচুক কৌতুকে।
পাতা:তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য - মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৯৬১).pdf/৩৩
অবয়ব
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩৫—২৬৪
তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য : প্রথম সর্গ
১১